পাতা:শিবাজী - যদুনাথ সরকার.pdf/৮৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জয়সিংহ ও শিবাজী
৮৩

 জয়সিংহ দেখিলেন যে, উন্মত্ত মুসলমান সেনানীদের হাত হইতে শিবাজীর প্রাণ রক্ষা করা কঠিন। অমনি পথ হইতে ১১ই জানুয়ারি শিবাজীকে নিজ সৈন্যসহ বিজাপুর-রাজ্যের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রদেশটি আক্রমণ করিতে পাঠাইয়া দিলেন, মুখে বলিলেন যে এইরূপে শত্রুসেনা ভাগ হইয়া যাইবে, মুঘলদিগের উপর তাহাদের সমস্ত আক্রমণটা পড়িবে না। জয়সিংহের পাশ হইতে রওনা হইবার পাঁচদিন পরে শিবাজী পনহালা-দুর্গের কাছে পৌছিলেন, এবং রাত্রি এক প্রহর থাকিতে হঠাৎ দুর্গ আক্রমণ করিলেন। কিন্তু দুর্গের সৈন্যগণ আগেই টের পাইয়া সজাগ ছিল, তাহারা মহাবিক্রমে যুদ্ধ করিল। শিবাজীর পক্ষে এক হাজার মারাঠা হতাহত হইয়া পড়িল। তাহার পর সূর্য্য উঠিল; পর্ব্বতের গা বাহিয়া যে মারাঠারা চড়িতেহিল তাহাদের স্পষ্ট দেখা গেল, এবং তাহাদের উপর ঠিক গুলি ও পাথর আসিয়া পড়িতে লাগিল (১৬ জানুয়ারি)। তখন শিবাজী হার মানিয়া চৌদ্দ ক্রোশ দূরে নিজ দুর্গ খেল্‌নায় ফিরিয়া গেলেন। কিন্তু ঐ অঞ্চলে তাঁহার লোকদের লুটপাট বন্ধ করিবার জন্য ছয় হাজার বিজাপুরী সৈন্য এবং দুইজন বড় সেনাপতি সেখানে আবদ্ধ হইয়া রহিলেন।

 মারাঠা সৈন্যদলে শিবাজীর পরেই নেতাজী পালকর সর্ব্বপ্রধান অধ্যক্ষ। তাঁহার উপাধি “সেনাপতি” এবং তিনি শিবাজীর বংশের এক কন্যাকে বিবাহ করেন। লোকমুখে তাঁহাকে “দ্বিতীয় শিবাজী” বলা হইত। বিজাপুর হইতে চার লক্ষ হোণ ঘুষ পাইয়া তিনি এই সময় হঠাৎ মুঘলপক্ষ ছাড়িয়া আদিল শাহর সঙ্গে যোগ দিলেন, এবং মুঘল অধীন গ্রাম শহর লুটিতে লাগিলেন। জয়সিংহ আর কি করেন? তিনি পাঁচ হাজারী মনসব, বিস্তৃত জাগীর, এবং নগদ আটত্রিশ হাজার টাকা দিয়া নেতাজীকে আবার নিজের দলে ফিরাইয়া আনিলেন (২০ মার্চ্চ ১৬৬৬)।