পাতা:শিবাজী - যদুনাথ সরকার.pdf/৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মহারাষ্ট্র দেশ ও মারাঠা জাতি

মহাগুণ জন্মিয়াছিল। খৃষ্টীয় সপ্তম শতাব্দীতে চীনা পর্যটক ইউয়ান্ চুয়াং মারাঠা জাতিকে এইরূপ চক্ষে দেখিয়াছিলেন,—“এই দেশের অধিবাসীরা তেজী ও যুদ্ধপ্রিয়; উপকার করিলে কৃতজ্ঞ থাকে, অপকার করিলে প্রতিহিংসা খোঁজে। কেহ বিপদে পড়িয়া আশ্রয় চাহিলে তাহারা ত্যাগস্বীকার করে, আর অপমান করিলে তাহাকে বধ না করিয়া ছাড়ে না। তাহারা প্রতিহিংসা লইবার আগে শত্রুকে শাসাইয়া দেয়।”

 যে সময় এই বৌদ্ধ-পথিক ভারতে আসেন, তখন মারাঠার দাক্ষিণাত্যের মধ্য অংশে সুবিস্তৃত ও ধনজনপুর্ণ রাজ্যের অধিকারী। তাহার পর চতুর্দ্দশ শতাব্দীতে মুসলমান-বিজয়ের ফলে স্বরাজ্য হারাইয়া তাহারা দাক্ষিণাত্যের পশ্চিম প্রান্তে পাহাড়ে জঙ্গলে আশ্রয় লইল, এবং গরীব অবস্থায় কোণঠাসা হইয়া পড়িল। এই নির্জ্জন দেশে জঙ্গল, অনুর্ব্বরা জমি এবং বন্যজন্তুর সহিত লড়াই করিয়া ক্রমে তাহারা ভব্যতা ও উদারতা অনেকটা হারাইল বটে, কিন্তু অধিকতর সাহসী, চতুর এবং ক্লেশসহিষ্ণু হইয়া উঠিল। মারাঠা-সৈন্যগণ সাহসী, বুদ্ধিমান এবং পরিশ্রমী; রাত্রে নিঃশব্দে আক্রমণ করা, অথবা শত্রুর জন্য ফঁদ পাতিয়া লুকাইয়া থাকা, সেনাপতির মুখ না চাহিয়া বুদ্ধিবলে নিজকে বিপদ হইতে মুক্ত করা, এবং যুদ্ধের অবস্থা বদলানর সঙ্গে সঙ্গে রণ-প্রণালী বদলানর ক্ষমতা—একাধারে এই গুণগুলি একমাত্র আফগান এবং মারাঠা জাতি ভিন্ন এশিয়া মহাদেশে অন্য কোন জাতির নাই।

সামাজিক সাম্যভাব

 ধনী এবং সুসভ্য সমাজে যেমন অসংখ্য শ্রেণীবিভাগ, উচ্চনীচ-ভেদ আছে, ষোড়শ শতাব্দীর সরল গরীব মারাঠাদের মধ্যে সেরূপ ছিল না। সেখানে ধনীর মান ও পদ দরিদ্র হইতে বড় বেশী উঁচু ছিল না, এবং অতি দরিদ্র লোকও যোদ্ধা বা কৃষকের কাজ করিত