পাতা:শিবাজী - যদুনাথ সরকার.pdf/৯৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
শিবাজী ও আওরংজীবের সাক্ষাৎ
৮৯

আম, আজ জন্মদিনের উৎসবে পরিপাটিরূপে সাজান হইয়াছে। দেওয়াল ও থামগুলি বহুমূল্য রঙীন কিংখাব ও শালে জড়ান, মেঝেতে উৎকৃষ্ট গালিচা বিছান। এখানে সব উচ্চশ্রেণীর আমীরওম্‌রা ও রাজারা খুব জমকাল পোষাক পরিয়া নিজ নিজ নির্দ্দিষ্ট শ্রেণীতে দাঁড়াইয়া আছেন। দেওয়ান-ই আমের সামনে ও দুইপাশে ঘাসে-ঢাকা নীচু আঙ্গিনায় লাল শালু-মোড়া কাঠের ডাণ্ডার সাহায্যে শামিয়ানা টাঙ্গান হইয়াছে। সারা আঙ্গিনাটি শতরঞ্চ ও চাদর দিয়া ঢাকা—এখানে নিম্নশ্রেণীর হাজার হাজার মনসবদার ও সাধারণ অনুচর দাঁড়াইবার স্থান পাইয়াছে। দেওয়ান-ই-আম গৃহের সম্মুখভাগ ও দুই পাশ খোলা, পিছন দিকটায় দুর্গমধ্যস্থ অন্তঃপুরের দেওয়াল। এই দেওয়ালের মাঝখানে মানুষের চেয়ে উঁচু একটি ছোট বারান্দা বাহির হইয়াছে; তাহাতে বাদশাহর সিংহাসন, পশ্চাতে অন্তঃপুর হইতে আসিবার দরজা-পর্দ্দা দিয়া ঢাকা। আর তাহার সামনে দরবার-গৃহের মেঝেতে থাম হইতে থামে রেলিং দিয়া ঘিরিয়া তিনটি কাটরা বা প্রকোষ্ঠ করা হইয়াছে। প্রথমেই সোনার রেলিং, এখানে মাত্র সর্ব্বোচ্চ শ্রেণীর ওমরার প্রবেশের অধিকার; তাহার পিছনে রূপার রেলিং, এখানে মধ্যম শ্রেণীর মনসবদারদের স্থান; সর্ব্ব পশ্চাতে রং করা কাঠের রেলিং, তাহার মধ্যে সামান্য কর্ম্মচারীদের দাঁড়াইবার ব্যবস্থা। প্রত্যেক কাটরায় একটি স্থানে রেলিং খুলিয়া লোকের যাতায়াতের পথ করা ছিল। হিন্দী-কবি ভূষণ সত্যই বলিয়াছেন, এই জন্মদিন-উৎসবের দরবারে অমরাপুরীতে জ্যোতির্ম্ময় দেবগণ-বেষ্টিত ইন্দ্রের মত আওরংজীব বিরাজ করিতেছিলেন।

 রাজসভা লোকে গমগম করিতেছে। সভাসদ গণের নানাবর্ণের পোষাক-পরিচ্ছদ এবং বিস্তৃত গালিচা ও কিংখাব দেখিয়া স্থানটাকে রঙ্গীনফুলের বাগান বলিয়া ভ্রম হয়। চারিদিকে ওমরা ও করদ-রাজাদের