পাতা:শিবাজী - যদুনাথ সরকার.pdf/৯৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৯০
শিবা জী

গা হইতে হীরা মোতি ও নানাপ্রকার মণির আলো ছড়াইয়া পড়িতেছে। বাদশাহ সিংহাসনে বসিয়াছেন।

 রামসিংহ এহেন সভায় শিবাজী ও তাঁহার দশজন প্রধান কর্ম্মচারীকে উপস্থিত করিলেন। মারাঠা-রাজার পক্ষ হইতে বাদশাহর পায়ের নিকট থালায় করিয়া দেড় হাজার মোহর নজর, এবং ছয় হাজার টাকা নিসার[১] স্বরূপ উপহার দেওয়া হইল। আওরংজীব সন্তুষ্ট হইয়া বলিলেন, “আও, শিবাজী রাজা~” শিবাজীকে হাত ধরিয়া বাদশাহর সামনে লইয়া যাওয়া হইল। তিনি তিনবার সালাম করিলেন, বাদশাহ তাহার প্রতিদান করিলেন। তাহার পর বাদশাহর ইঙ্গিতে শিবাজীকে তাঁহার জন্য নির্দিষ্ট স্থানে লইয়া গিয়া দাঁড় করান হইল। দরবারের কাজ চলিতে লাগিল, যেন সকলেই শিবাজীর কথা ভুলিয়া গেল।

 কত আদর-অভ্যর্থনার আশা বুকে ধরিয়া শিবাজী আগ্রা আসিয়া ছিলেন, ইহাই কি তাহার পরিণাম? দরবারে আসিবার আগে হইতেই তাঁহার মনে দুঃখ ও সন্দেহের সঞ্চার হইয়াছিল। প্রথমতঃ, আগ্রার বাহিরে গিয়া কোন বড় ওমরা তাঁহাকে অভ্যর্থনা করেন নাই, রামসিংহ (আড়াই হাজারী) এবং মুখলিস্ খাঁ (দেড় হাজারী)-র মত দুইজন মধ্যম শ্রেণীর ওমরা কিছুদুর অগ্রসর হইয়া তাঁহাকে সঙ্গে করিয়া রাজধানীতে আনেন। আর, আজ বাদশাহর দর্শন মিলিবার পর তাঁহার কোন উচ্চ উপাধি, বা মূল্যবান উপহার, এমন কি প্রশংসা-বাক্যও লাভ হইল না। শিবাজী দেখিলেন, যেখানে তিনি দাঁড়াইয়া আছেন সেখান হইতে বাদশাহ অনেক দুরে—সম্মুখে সারির পর সারি ওমরার দল

  1. বাদশাহর দেহ হইতে অশুভ দৃষ্টির প্রভাব দূর করিবার জন্য যে টাকা বা রত্ন থালায় করিয়া তাঁহার মাথার চারিদিকে ঘুরাইয়া পরে লোকজনদের মধ্যে ছড়াইয়া দেওয়া হইত, তাহার নাম ছিল নিসার।