পাতা:শিবাজী - যদুনাথ সরকার.pdf/৯৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
শিবাজী ও আওরংজীবের সাক্ষাৎ
৯১

দাঁড়াইয়া। তিনি রামসিংহকে জিজ্ঞাসা করিয়া জানিলেন যে তাহার স্থানটি পাঁচ হাজারী মনসবদারদের মধ্যে। তখন তিনি উচ্চ স্বরে বলিয়া উঠিলেন—“কি? আমার সাত বৎসরের বালক পুত্র শম্ভুজী দরবারে না আসিয়াই পাঁচ হাজারী হইয়াছিল। আমার চাকর নেতাজীও পাঁচ হাজারী। আর আমি, এত বিজয়-গৌরবের পর স্বয়ং আগ্রায় আসিয়া শেষে কেবলমাত্র সেই পাঁচ হাজারীই হইলাম।”

 তাহার পর তিনি জিজ্ঞাসা করিলেন—তাঁহার সামনের ওমরাটি কে? রামসিংহ উত্তর দিলেন—‘মহারাজা যশোবন্ত সিংহ।’ শুনিয়া শিবাজী রাগে চেঁচাইয়া উঠিলেন, “যশোবন্ত! যাহার পিঠ আমার সৈন্যেরা কতবার রণক্ষেত্রে দেখিয়াছে! আমার স্থান তাহারও নীচে? ইহার অর্থ কি?”

 সকলের সামনে এইরূপ তীব্র অপমানে জ্বলিয়া উঠিয়া শিবাজী উঁচু গলায় রামসিংহের সঙ্গে তর্ক করিতে লাগিলেন; বলিলেন-“তরবারি দাও, আমি আত্মহত্যা করিব। এ অপমান সহ্য করা যায় না।” শিবাজীর কড়া কথা এবং উত্তেজিত অঙ্গভঙ্গীতে রাজসভায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হইল; রামসিংহ মহা ভাবনায় পডিয়া তাঁহাকে ঠাণ্ডা করিতে চেষ্টা করিলেন, কিন্তু কোনই ফল হইল না। চারিদিকেই বিদেশী ও অজানা মুখ, কোন বন্ধু বা স্বজন নাই—রুদ্ধ রোষে ফুলিতে ফুলিতে শিবাজী অজ্ঞান হইয়া পড়িয়া গেলেন। দরবারে একটা হৈ চৈ পড়িয়া গেল। বাদশাহ জিজ্ঞাসা করিলেন, ব্যাপার কি? চতুর রামসিংহ উত্তর দিলেন,—“বাঘ জঙ্গলী জানোয়ার। তার এখানে গরম লাগিয়া অসুখ হইয়াছে।” পরে বলিলেন,—“মারাঠা-রাজা দক্ষিণী লোক, বাদশাহী সভায় আদব-কায়দা জানেন না।”

 সদয় আওরংজীব হুকুম দিলেন, পীড়িত রাজাকে পাশের ঘরে লইয়া গিয়া মুখে গোলাপজল ছিটাইয়া দেওয়া হউক; জ্ঞান হইলে তিনি