পাতা:শিবাজী - যদুনাথ সরকার.pdf/৯৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৯৪
শি বা জী

দেশে ফিরিল। শিবাজী এখন একা-তিনি নিজের পলায়নের পথ নিজেই দেখিলেন।

 অসুখের ভাণ করিয়া তিনি শয্যায় আশ্রয় লইলেন; ঘর হইতে আর বাহির হন না। ব্যাধি দূর করিবার জন্য ব্রাহ্মণ সাধুসজ্জন ও সভাসদদিগের মধ্যে তিনি প্রত্যহ বড় বড় ঝুড়ি ভরিয়া ফল ও মিঠাই বিতরণ করিতে সুরু করলেন। প্রত্যেক ঝুড়ি বাঁশের বাঁকে ঝুলাইয়া দুইজন করিয়া বাহক বৈকালে বাসাবাড়ী হইতে বাহিরে লইয়া যাইত। কোতোয়ালের প্রহরীরা প্রথমে দিনকতক ঝুড়ি পরীক্ষা করিয়া দেখিত, তাহার পর বিনা পরীক্ষায় যাইতে দিতে লাগিল।

 শিবাজী এই সুযোগেরই অপেক্ষা করিতেছিলেন। ১৯এ আগষ্ট বৈকালে তিনি প্রহরীদের বলিয়া পাঠাইলেন যে, তাঁহার অসুখ বাড়িয়াছে, তাহারা যেন তাঁহাকে বিরক্ত না করে। এদিকে ঘরের মধ্যে তাঁহার বৈমাত্রেয় ভ্রাতা (শাহজীর দাসীপুত্র) হিরাজী ফর্জন্দ,— দেখিতে কতকটা শিবাজীর মতই—শিবাজীর খাটিয়ায় শুইয়া, চাদরে গা-মুখ ঢাকিয়া, শুধু ডান হাত বাহির করিয়া রাখিলেন; তাঁহার এই হাতে শিবাজীর সোনার বালা দেখা যাইতেছিল। আর সন্ধ্যার সময় শিবাজী ও শম্ভুজী দুইটি ঝুড়ির মধ্যে জড়সড় হইয়া শুইয়া রহিলেন, তাঁহাদের উপর বেশ করিয়া পাতা ঢাকা দেওয়া হইল; আর তাহাদের বাঁকের সামনে ও পিছনে কয়েক ঝুড়ি সত্যকার ফল মিঠাই ভরিয়া সানিবন্দী হইয়া বাহকগণ বাসা হইতে বাহির হইল; বাদশাহর প্রহরীরা কোনই উচ্চবাচ্য করিল না, কেন না ইহা ত নিত্যকার ঘটনা।

 আগ্রা শহরের বাহিরে পৌঁছিয়া একটি নির্জ্জন স্থানে ঝুড়ি নামাইয়া বাহকগণ মজুরি লইয়া চলিয়া গেল। তাহার পর শিরাজী ও শম্ভুজী ঝুড়ি হইতে বাহির হইয়া সঙ্গে যে দুইটি মারাঠা-অনুচর আসিয়াছিল তাহাদের