পাতা:শ্রীকান্ত (প্রথম পর্ব).djvu/১৪৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৪৭
শ্রীকান্ত

জানি নাই। তবে হয় ত মৃত্যুও কালো বলিয়া কুৎসিত নয়! একদিন যখন সে আমাকে দেখা দিতে আসিবে, তখন হয় ত তার এম্‌নি অফুরন্ত, সুন্দর রূপে আমার দুইচক্ষু জুড়াইয়া যাইবে। আর সে দেখার দিন যদি আজই আসিয়া থাকে, তবে হে আমার কালো! হে আমার অভ্যগ্র পদধ্বনি! হে আমার সর্ব্ব-দুঃখ-ভয়-ব্যথাহারী অনন্ত সুন্দর! তুমি তোমার অনাদি আঁধারে সর্ব্বাঙ্গ ভরিয়া আমার এই দুটি চোখের দৃষ্টিতে প্রত্যক্ষ হও, আমি তোমার এই অন্ধতমসাবৃত নির্জ্জন মৃত্যুমন্দিরের দ্বারে তোমাকে নির্ভয়ে বরণ করিয়া মহানন্দে তোমার অনুসরণ করি। সহসা মনে হইল, তাই ত! তাঁহার ওই নির্ব্বাক্ আহ্বান উপেক্ষা করিয়া অত্যন্ত হীন অন্তবাসীর মত এই বাহিরে বসিয়া আছি কি জন্য? একেবারে ভিতরে, মাঝখানে গিয়া বসি না কেন!

 নামিয়া গিয়া ঠিক মধ্যস্থলে একেবারে চাপিয়া বসিয়া পড়িলাম। কতক্ষণ যে এখানে এইভাবে স্থির হইয়াছিলাম, তখন হুঁস ছিল না। হুঁস হইলে দেখিলাম, তেমন অন্ধকার আর নাই―আকাশের একপ্রান্ত যেন স্বচ্ছ হইয়া গিয়াছে; এবং তাহারই অদূরে শুকতারা দপ্ দপ্‌ করিয়া জ্বলিতেছে। একটা চাপা কথাবার্ত্তার কোলাহল কানে গেল। ঠাহর করিয়া দেখিলাম, দূরে শিমূল গাছের আড়ালে বাঁধের উপর দিয়া কাহারা যেন চলিয়া আসিতেছে; এবং তাহাদের দুই-চারিটা লণ্ঠনের আলোকও আশে-পাশে ইতস্ততঃ দুলিতেছে। পুনর্ব্বার বাঁধের উপর উঠিয়া সেই আলোকেই দেখিলাম, দুইখানা গরুর গাড়ীর অগ্রপশ্চাৎ জন-কয়েক লোক এই দিকেই অগ্রসর হইতেছে। বুঝিলাম, কাহারা এই পথে ষ্টেশনে যাইতেছে।

 মাথায় সুবুদ্ধি আসিল যে, পথ ছাড়িয়া আমার দূরে সরিয়া যাওয়া আবশ্যক। কারণ আগন্তুকের দল যত বুদ্ধিমান এবং সাহসীই হোক,