পাতা:শ্রীকান্ত (প্রথম পর্ব).djvu/১৮৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৮৫
শ্রীকান্ত

 আমি সমস্তই দেখিলাম, সমস্ত বুঝিলাম। যে গোপনেই আসিয়াছিল, তাহাকে গোপনেই যাইতে দিলাম। কিন্তু এই নির্জ্জন নিশীথে সে যে তাহার কতখানি আমার কাছে ফেলিয়া রাখিয়া গেল, তাহা কিছুই জানিতে পারিল না। সকালে প্রস্ফুট জ্বর লইয়াই ঘুম ভাঙিল। চোখ মুখ জ্বালা করিতেছে; মাথা এত ভারি যে, শয্যাত্যাগ করিতেও ক্লেশ বোধ হইল। তবু যাইতেই হইবে। এ বাটীতে নিজেকে আর একদণ্ডও বিশ্বাস নাই—সে যে-কোন মুহূর্ত্তেই ভাঙ্গিয়া পড়িতে পারে। নিজের জন্যও তত নয়। কিন্তু রাজলক্ষ্মীর জন্যই রাজলক্ষ্মীকে ছাড়িয়া যাইতে হইবে, তাহাতে আর কিছুমাত্র দ্বিধা করা চলিবে না।

 মনে মনে ভাবিয়া দেখিলাম সে তাহার বিগত জীবনের কালি অনেকখানিই ধুইয়া পরিষ্কার করিয়া ফেলিয়াছে। আজ তাহার চারিপাশে ছেলে-মেয়েরা মা বলিয়া ঘিরিয়া দাঁড়াইয়াছে। এই প্রীতি ও ভক্তির আনন্দধাম হইতে তাহাকে অসম্মানিত করিয়া, ছিনাইয়া বাহির করিয়া আনিব—এত বড় প্রেমের এই সার্থকতা কি অবশেষে আমার জীবন-অধ্যায়েই চিরদিনের জন্য লিপিবদ্ধ হইয়া থাকিবে!

 পিয়ারী ঘরে ঢুকিয়া কহিল, এখন দেহটা কেমন আছে?

 বলিলাম, খুব মন্দ নয়! যেতে পারব।

 আজ না গেলেই কি নয়?

 হাঁ, আজ যাওয়া চাই।

 তা হ’লে বাড়ী পৌঁছেই একটা খবর দিয়ো। নইলে আমাদের বড় ভাবনা হবে।

 তাহার অবিচলিত ধৈর্য্য দেখিয়া মুগ্ধ হইয়া গেলাম। তৎক্ষণাৎ সম্মত হইয়া বলিলাম, আচ্ছা, আমি বাড়ীতেই যাব। আর গিয়েই তোমাকে খবর দেব।