পাতা:শ্রীকান্ত (প্রথম পর্ব).djvu/৪৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৭
শ্রীকান্ত

হাতটি ধরিয়া টানিয়া আনিয়া বৈঠকখানায় পাপোষের উপর দাঁড় করাইয়া দিল।

 সেখানে মেজদা গভীর মনোযোগের সহিত পাশের পড়া পড়িতেছিলেন। মুখ তুলিয়া একটিবার মাত্র আমার প্রতি দৃষ্টিপাত করিয়া পুনশ্চ পড়ায় মন দিলেন। অর্থাৎ বাঘ শিকার হস্তগত করিয়া নিরাপদে বসিয়া যেরূপ অবহেলার সহিত অন্যদিকে চাহিয়া থাকে, তাঁহারও সেই ভাব। শাস্তি দিবার এত বড় মাহেন্দ্রযোগ তাঁহার ভাগ্যে আর কখনও ঘটিয়াছে কি না সন্দেহ।

 মিনিট্‌খানেক চুপচাপ। সারারাত্রি বাহিরে কাটাইয়া গেলে কর্ণ-যুগল ও উভয় গণ্ডের উপর যে-সকল ঘটনা ঘটিবে, তাহা আমি জানিতাম। কিন্তু আর যে দাঁড়াইতে পারি না! অথচ কর্ম্মকর্ত্তারও ফুরসৎ নাই। তাঁহারও যে আবার পাশের পড়া!

 আমাদের এই মেজদাদাটিকে আপনারা বোধ করি এত শীঘ্র বিস্মৃত হন নাই। সেই, যাঁহার কঠোর তত্ত্বাবধানে কাল সন্ধ্যা-কালে আমরা পাঠাভ্যাস করিতেছিলাম, এবং ক্ষণেক পরেই যাঁহার সুগম্ভীর ‘অোঁ-অোঁ’ রবে ও সেজ উল্টানোর চোটে গত রাত্রির সেই ‘দি রয়েল বেঙ্গল’কেও দিশাহারা হইয়া একেবারে ডালিমতলায় ছুটিয়া পলাইতে হইয়াছিল—সেই তিনি।

 পাঁজিটা একবার দেখ্‌ দেখি রে সতীশ, এ বেলা আবার বেগুন খেতে আছে না কি; বলিতে বলিতে পাশের দ্বার ঠেলিয়া পিসিমা ঘরে পা দিয়াই আমাকে দেখিয়া অবাক্‌ হইয়া গেলেন।—কখন্ এলি রে? কোথায় গিয়েছিলি? ধন্যি ছেলে বাবা তুমি—সারা রাত্রিটা ঘুমোতে পারিনি—ভেবে মরি, সেই যে ইন্দ্রর সঙ্গে চুপিচুপি বেরিয়ে গেল—আর দেখা নেই। না খাওয়া, না দাওয়া! কোথা ছিলি বল্‌ ত হতভাগা? মুখ কালিবর্ণ,