পাতা:শ্রীকান্ত (প্রথম পর্ব).djvu/৫১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৯
শ্রীকান্ত

যদি তুই হাত দিস্‌ আমি জান্‌তে পারি, এই থামে বেঁধে চাকর দিয়ে তোকে আমি বেত দেওয়াব। বেহায়া, নিজে ফি বছর ফেল হচ্চে―ও আবার যায় পর্‌কে শাসন কর্‌তে। কেউ পড়ুক, না পড়ুক, কারুকে তুই জিজ্ঞেসা পর্য্যন্ত কর্‌তে পাবিনে। বলিয়া তিনি আমাকে লইয়া যে পথে প্রবেশ করিয়াছিলেন, সেই পথে বাহির হইয়া গেলেন। মেজদা মুখ কালি করিয়া বসিয়া রহিল। এ আদেশ অবহেলা করিবার সাধ্য বাড়ীতে কাহারো নাই—সে কথা মেজদা ভাল করিয়াই জানিত।

 আমাকে সঙ্গে করিয়া পিসিমা তাঁর নিজের ঘরের মধ্যে আনিয়া কাপড় ছাড়াইয়া দিলেন এবং পেট ভরিয়া গরম গরম জিলাপি আহার করাইয়া বিছানায় শোয়াইয়া দিয়া—আমি মরিলেই তাঁর হাড় জুড়ায়—এই কথা জানাইয়া দিয়া বাহির হইতে শিকল বন্ধ করিয়া চলিয়া গেলেন।

 মিনিট্-পাঁচেক পরেই খুট্ করিয়া সাবধানে শিকল খুলিয়া ছোড়দা হাঁপাইতে হাঁপাইতে আসিয়া আমার বিছানার উপর উপুড় হইয়া পড়িল। আনন্দের আতিশয্যে প্রথমটা সে কথা কহিতেই পারিল না। একটুখানি দম্ লইয়া ফিস্ ফিস্‌ করিয়া কহিল, মেজদাকে মা কি হুকুম দিয়েচে জানিস্? আমাদের কোন কথায় তার থাক্‌বার জো-টি নেই। তুই, আমি, য’তে একঘরে পড়্‌ব—মেজদা অন্য ঘরে পড়্‌বে। আমাদের পুরানো পড়া বড়দা দেখবেন! ওকে আমরা আর কেয়ার কর্‌ব না! বলিয়া সে দুই হাতের বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ একত্র করিয়া সবেগে আন্দোলিত করিয়া দিল।

 যতীনদাও পিছনে পিছনে আসিয়া হাজির হইয়াছিল। সে তাহার কৃতিত্বের উত্তেজনায় একেবারে অধীর হইয়া উঠিয়াছিল; এবং ছোড়দাকে এই শুভ সংবাদ দিয়া সে-ই এখানে আনিয়াছিল। প্রথমে সে খুব খানিকটা হাসিয়া লইল। হাসি থামিলে নিজের বুকে বারংবার করাঘাত করিয়া কহিল, আমি! আমি! আমার জন্যেই হ’ল তা জানো? ওকে আমি