পাতা:শ্রীকান্ত (প্রথম পর্ব).djvu/৯

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

করিয়া চলিয়া গেল, আর কখনও ফিরিয়া আসিল না। উঃ—সে দিনটা কি মনেই পড়ে!

 ইস্কুলের মাঠে বাঙ্গালী ও মুসলমান ছাত্রদের ‘ফুটবল ম্যাচ’। সন্ধ্যা হয় হয়। মগ্ন হইয়া দেখিতেছি। আনন্দের সীমা নাই। হঠাৎ—ওরে বাবা—এ কি রে! চটাপট্ শব্দ এবং মারো শালাকে, ধরো শালাকে। কি একরকম যেন বিহ্বল হইয়া গেলাম। মিনিট দুই-তিন! ইতিমধ্যে কে যে কোথায় অন্তর্ধান হইয়া গেল, ঠাহর পাইলাম না। ঠাহর পাইলাম ভাল করিয়া তখন, যখন পিঠের উপর একটা আস্ত-ছাতির বাঁট পটাশ করিয়া ভাঙ্গিল এবং আরো গোটা দুই-তিন মাথার উপর, পিঠের উপর উদ্যত দেখিলাম। পাঁচসাতজন মুসলমান-ছোক্‌রা তখন চারিদিকে ব্যূহ রচনা করিয়াছে—পলাইবার এতটুকু পথ নাই।

 আরও একটা ছাতির বাঁট—আরও একটা। ঠিক সেই মুহূর্ত্তে যে মানুষটি বাহির হইতে বিদ্যুদ্‌গতিতে ব্যূহভেদ করিয়া আমাকে আগলাইয়া দাঁড়াইল—সেই ইন্দ্রনাথ।

 ছেলেটি কালো। তাহার বাঁশীর মত নাক, প্রশস্ত সুডৌল কপাল, মুখে দুই-চারিটা বসন্তের দাগ। মাথায় আমার মতই, কিন্তু বয়সে কিছু বড়। কহিল, ভয় কি! ঠিক আমার পিছনে পিছনে বেরিয়ে এস।

 ছেলেটির বুকের ভিতর সাহস এবং করুণা যাহা ছিল, তাহা সুদুর্ল্লভ হইলেও, অসাধারণ হয় ত নয়। কিন্তু তাহার হাত দুখানি যে সত্যই অসাধারণ, তাহাতে লেশমাত্র সন্দেহ নাই।

 শুধু জোরের জন্য বলিতেছি না। সে দুটি দৈর্ঘ্যে তাহার হাঁটুর নীচে পর্য্যন্ত পড়িত। ইহার পরম সুবিধা এই যে, যে-ব্যক্তি জানিত না, তাহার কস্মিন্‌কালেও এ আশঙ্কা মনে উদয় হইতে পারে না যে বিবাদের সময় ঐ খাটো মানুষটি অকস্মাৎ হাত-তিনেক লম্বা একটা হাত বাহির করিয়া