পাতা:শ্রীকান্ত (প্রথম পর্ব).djvu/৯২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
শ্রীকান্ত
৯০

 প্রস্তাব শুনিয়া নতুনদা এক মুহূর্ত্তেই একেবারে অগ্নিশর্ম্মা হইয়া উঠিলেন, তবে আন্‌লি কেন হতভাগা! যেমন ক’রে হোক্, তোকে পৌঁছে দিতেই হবে। আমায় থিয়েটারে হারমোনিয়ম বাজাতেই হবে—তারা বিশেষ ক’রে ধরেচে। ইন্দ্র কহিল, তাদের বাজাবার লোক আছে নতুনদা। তুমি না গেলেও আটকাবে না।

 না! আটকাবে না? এই মেড়োর দেশের ছেলেরা বাজাবে হারমোনিয়ম! চল্‌, যেমন ক’রে পারিস নিয়ে চল্‌। বলিয়া তিনি যেরূপ মুখভঙ্গি করিলেন, তাহাতে আমার গা জ্বালিয়া গেল। ইঁহার বাজনা পরে শুনিয়াছিলাম; কিন্তু সে কথায় আর প্রয়োজন নাই।

 ইন্দ্রর অবস্থা-সঙ্কট অনুভব করিয়া আমি আস্তে আস্তে কহিলাম, ইন্দ্র, গুণটেনে নিয়ে গেলে হয় না? কথাটা শেষ হইতে না হইতেই আমি চমকাইয়া উঠিলাম। তিনি এমনি দাঁত-মুখ ভ্যাংচাইয়া উঠিলেন যে, সে মুখখানি আমি আজিও মনে করিতে পারি। বলিলেন, তবে যাও না, টানো গে না হে! জানোয়ারের মত ব’সে থাকা হচ্ছে কেন?

 তার পরে একবার ইন্দ্র, একবার আমি, গুণ টানিয়া অগ্রসর হইতে লাগিলাম। কখনো বা উঁচু পাড়ের উপর দিয়া, কখনো বা নীচে নামিয়া এবং সময়ে সময়ে সেই বরফের মত ঠাণ্ডা জলের ধার ঘেঁষিয়া অত্যন্ত কষ্ট করিয়া চলিতে হইল। আবার তারই মাঝে মাঝে বাবুর তামাক সাজার জন্য নৌকা থামাইতে হইল। অথচ বাবুটি ঠায় বসিয়া রহিলেন—এতটুকু সাহায্য করিলেন না। ইন্দ্র একবার তাঁকে হালটা ধরিতে বলায়, জবাব দিলেন, তিনি দস্তানা খুলে এই ঠাণ্ডায় নিমোনিয়া কর্‌তে পারিবেন না। ইন্দ্র বলিতে গেল, না খুলে—

 হ্যাঁ। দামী দস্তানাটা মাটি ক’রে ফেলি আর কি! নে—যা করচিস্‌ কর।