পাতা:শ্রীকান্ত - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/১৩৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Re শ্ৰীকান্ত কতক্ষণ যে এখানে এইভাবে স্থির হইয়া ছিলাম, তখন হ’স ছিল না । হুস হইতে দেখিলাম, তেমন অন্ধকার আর নাই-আকাশের একপ্ৰান্ত যেন স্বচ্ছ হইয়া গিয়াছে এবং তাহারই অদূরে শুকতারা দীপ দাপ করিয়া জ্বলিতেছে । একটা চাপা কথাবার্তার কোলাহল কাণে গেল । ঠাহর করিয়া দেখিলাম, দূরে শিমুলগাছের আড়ালে বাঁধের উপর দিয়া কাহার যেন চলিয়া আসিতেছে এবং তাহদের দুই-চারিটা লণ্ঠনের আলোকও আশেপাশে ইতস্ততঃ দুলিতেছে। পুনৰ্বার বঁাধের উপর উঠিয়া সেই আলোকেই দেখিলাম, দু’খানা গরুর গাড়ীর অগ্রপশ্চাৎ জনকয়েক লোক এই দিকেই অগ্রসর হইতেছে। বুঝিলাম, কাহারা এই পথে ষ্টেশনে যাইতেছে । মাথায় সুবুদ্ধি আসিল যে, পথ ছাড়িয়া আমার দূরে সরিয়া যাওয়া আবশ্যক। কারণ, আগন্তুকের দল যত বুদ্ধিমান এবং সাহসীই হোক, হঠাৎ এই অন্ধকার রাত্ৰিতে এরূপ স্থানে আমাকে একাকী ভূতের মত দাড়াইয়া "থাকিতে দেখিলে, আর কিছু না করুক, একটা বিষম হৈ হৈ রৈ রৈ চীৎকার তুলিয়া দিবে, তাহাতে আর সংশয়ই নাই । ফিরিয়া আসিয়া পূর্বস্থানে দাড়াইলাম ; এবং অনতিকাল পরেই ছাঁই-দেওয়া দু’খানা গো-শকট পাঁচ-ছয়জনের প্রহরায় সম্মুখে আসিয়া উপস্থিত হইল। একবার মনে হইল, ইহাদের অগ্ৰগামী লোক দুটা আমার দিকে চাহিয়াই ক্ষণকালের জন্য স্থির হইয়া দাড়াইয়া অতি মৃদুকণ্ঠে কি যেন বলাবলি করিয়াই পুনরায় অগ্রসর হইয়া গেল ; এবং অনতিকাল মধ্যেই সমস্ত দলবল বঁধের ধারে একটা বঁকড়া-গাছের অন্তরালে অদৃশ্য হইয়া গেল। রাত্রি আর বেশী বাকি নাই অনুভব করিয়া ফিরিবার উপক্রম করিতেছি, এমনি সময়ে সেই বৃক্ষান্তরাল হইতে সু-উচ্চ কণ্ঠের ডাক কানে গেল, শ্ৰীকান্তবাবু সাড়া দিলাম, কে রে, রতন ? আজ্ঞে, হাঁ বাবু, আমি। একটু এগিয়ে আসুন। দ্রুতপদে বঁধের উপর উঠিয়া ডাকিলাম, রতন, তোরা কি বাড়ী ঘাচ্ছিস ?