পাতা:শ্রীকান্ত - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/১৭৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

चैकारछ বলিলেন, লোকত ধৰ্মত: তিনিই এখন আমার মাতৃস্থানীয়া এবং দায়িত্বগ্রহণের প্রথম সোপান-স্বরূপ আমার সাংসারিক অবস্থা পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে পৰ্যালোচনা করিতে প্ৰবৃত্ত হইলেন। বাবা কত রাখিয়া গিয়াছেন, মায়ের কি কি গহনা আছে, এবং তাহা কাহার কাছে আছে, আমি চাকরি কবি না কেন, এবং করিলে কত টাকা আন্দাজ মাহিনা পাইতে পারি, ইত্যাদি ইত্যাদি । তঁহার মুখ দেখিয়া মনে হইল, এই আলোচনার ফল তাহার কাছে তেমন সন্তোষজনক হইল না। বলিলেন, তাহার কোন এক আত্মীয় বৰ্মা মুম্বুকে চাকরি করিয়া ‘লাল’ হইয়া গিয়াছে, অর্থাৎ অতিশয় ধনবান হইয়াছে। সেখানকার পথে-ঘাটে টাকা ছড়ানো আছে-শুধু কুড়াইয়া লইবার অপেক্ষা মাত্র । সেখানে জাহাজ হইতে নামিতে-না-নামিতে বাঙালীদের সাহেবরা কাধে করিয়া তুলিয়া লইয়া গিয়া চাকরি দেয়-এইরূপ অনেক কাহিনী। পরে দেখিয়াছিলাম, এই ভ্ৰান্ত বিশ্বাস শুধু তাহার একার নহে, এমন অনেক লোকই এই মায়া-মরীচিকায় উন্মত্তপ্ৰায় হইয়া সহায়-সম্বলহীন অবস্থায় সেখানে ছুটিয়া গিয়াছে, এবং মোহভঙ্গের পর তাহাদিগকে ফিরিয়া পাঠাইতে আমাদের কম ক্লেশ সহিতে হয় নাই। কিন্তু সে-কথা এখন থাক। গঙ্গাজলমায়ের বর্মী মুম্বুকের বিবরণ আমাকে তীরের মত বিধিল। ‘লাল’ হইবাব আশায় নহে-আমাব মধ্যে যে “ভবঘুরে’টা কিছুদিন হইতে ঝিমাইতেছিল, * সে তাহার শ্ৰান্তি ঝাড়িয়া ফেলিয়া দিয়া এক মুহুর্তেই খাড়া হইয়া উঠিল। যে সমুদ্রকে ইতিপূর্বে শুধু দূর হইতে দেখিয়াই মুগ্ধ হইয়া গিয়াছিলাম, সেই অনন্ত অশ্ৰান্ত জলরাশি ভেদ করিয়া যাইতে পাইব, এই চিন্তাই আমাকে একেবারে অতিষ্ঠ করিয়া তুলিল। কোনমতে একবার ছাড়া পাইলে হয় । মানুষকে মানুষ যত প্রকারে জেরা করিতে পারে, তাহার কোনটাই গঙ্গাজল-মা আমাকে বাদ দেন নাই। সুতরাং, নিজের মেয়ের পাত্র হিসাবে আমাকে যে তিনি মুক্তি দিয়াছেন, এ বিষয়ে আমি একপ্রকার নিশ্চিন্তই ছিলাম। কিন্তু রাত্রে খাবার সময় তাহার ভূমিকার ধরন দেখিয়া উদ্বিগ্ন হইয়া উঠিলাম। দেখিলাম, আমাকে একেবারে হাতছাড়া করা তাহার অভিপ্ৰায় নয়। তিনি এই বলিয়া শুরু করিলেন যে, মেয়ের বরাতে সুখ