পাতা:শ্রীকান্ত - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/১৯৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

R2 ễựịg সিড়ি লাগানো আছে। জাহাজের খোলে নামিবার এই পথ। আবদ্ধ নালার মুখ খুলিয়া দিলে বৃষ্টির সঞ্চিত জল যেমন খরবেগে নীচে পড়ে, ঠিক তেমনি করিয়া এই দল স্থান অধিকার করিতে মারি-বাঁচি জ্ঞানশূন্য হইয়া অবরোহণ করিতে লাগিল ; আমাব যতদূর মনে পড়ে, আমার নীচে যাইবার ইচ্ছাও ছিল না, পা দিয়া হঁটিয়াও নামি নাই। ক্ষণকালেব জন্য সংজ্ঞা হারাইয়াছিলাম, কেহ সন্দেহ প্ৰকাশ করিলেও বোধ করি, শপথ করিয়া অস্বীকার কবিতে পারি না । তবে সচেতন হইয়া দেখিলাম, খোলের মধ্যে অনেক দূরে এক কোণে একাকী দাড়াইয়া আছি। পায়ের নীচে চাহিয়া দেখি, ইতিমধ্যে ভোজবাজীর মত চক্ষের পলকে যে যাহার কম্বল বিছাইয়া বাক্স-পেটরার বেড়া দিয়া নিরাপদে বসিয়া প্ৰতিবেশীর পরিচয় গ্ৰহণ করিতেছে। এতক্ষণে আমার সেই নম্বর-আঁটা কুলি আসিয়া দেখা দিল ; কহিল, তোরঙ্গ ও বিছানা উপরে রেখেছি ; যদি বলেন, नैौ ङनि । বলিলাম, না, বরঞ্চ আমাকেও কোনমতে উদ্ধার ক’রে উপরে নিয়ে চল । কারণ, পরের বিছানা না মাড়াইয়া, তাহার সহিত হাতাহাতির সম্ভাবনা না ঘটাইয়া, পা ফেলিতে পারি, এমন একটুখানি স্থানও চোখে পড়িল না । বর্ষার দিনে উপরে জলে ভিজি সেও ভালো, কিন্তু এখানে আর একদণ্ডও না । কুলিটা অধিক পয়সার লোভে, অনেক চেষ্টায়, অনেক তর্কাতর্কি করিয়া কম্বল ও সতরঞ্চির এক-আধটু ধার মুড়িয়া আমাকে সঙ্গে করিয়া উপরে আনিল এবং আমার জিনিসপত্র দেখাইয়া দিয়া বকশিশ লইয়া প্ৰস্থান করিল। এখানেও সেই ব্যাপার-বিছানা পাতিবার জায়গা নাই । কাজেই নিরুপায় হইয়া নিজের তোরঙ্গটার উপরেই নিজের বসিবার উপায় করিয়া লইয়া নিবিষ্টচিত্তে মা ভাগীরথীর উভয় কুলের মহিমা নিরীক্ষণ করিতে লাগিলাম। স্টীমার তখন চলিতে আরম্ভ করিয়াছিল। বহুক্ষণ হইতেই পিপাসা পাইয়াছিল। এই দুই ঘণ্টাকাল যে কাণ্ড মাথার উপর দিয়া বহিয়া গেল, তাহাতে বুক শুকাইয়া উঠে না,-এমন কঠিন বুক সংসারে অল্পই আছে। কিন্তু বিপদ এই হইয়াছিল যে, সঙ্গে না ছিল।