পাতা:শ্রীকান্ত - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/২০২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কৌটা তুলিয়া সাতশ' রাক্ষসীর প্রাণ-সোনার ভোমরা হাতে পিষিয়া মারিয়াছিল, এবং সেই সাতশ' রাক্ষসী মৃত্যু-যন্ত্রণায় চীৎকার করিতে করিতে পদভরে সমস্ত পৃথিবী মাডাইয়া গুড়াইয়া ছুটিয়া আসিয়াছিল, এও যেন তেমনি কোথায় কি-একটা বিপ্লব বাধিয়াছে। তবে বাক্ষসী সাতশ’ নয়, শতকোটি; উন্মত্ত কোলাহলে এই দিকেই ছুটিয়া আসিতেছে। আসিয়াও পড়িল। রাক্ষসী নয়-ঝড়। তবে এর চেয়ে বোধ কবি তাদের আসাই ঢের ভাল ছিল । এই দুর্জয় বায়ুর শক্তি বৰ্ণনা করা ত ঢের দূরেব কথা, সমগ্ৰ চেতনা দিয়া অনুভব করাও যেন মানুষেৰ সামর্থ্যের বাহিবে। জ্ঞান-বুদ্ধি, সমস্ত অভিভূত করিষা শুদ্ধমাত্র এমনি একটা অস্পষ্ট অথচ নিঃসন্দেহ ধারণা মনের মধ্যে জাগিয়া রহিল যে, দুনিয়াব মিয়াদ একেবারে নিঃশেষ হইতে আর বিলম্ব কত! পাশেই যে লোহার খুটি ছিল, গলার চাদর দিয়া নিজেকে তাহাব সঙ্গে বাধিয়া ফেলিয়াছিলাম, অনুক্ষণ মনে হইতে লাগিল, এইবার ছিাড়িয়া ফেলিয়া আমাকে সাগরের মাঝখানে উডাইয়া লইয়া ফেলিবে । হঠাৎ মনে হইল, জাহাজের গায়ে কালো জন যে ভিতরের ধাক্কায় বজবজ করিয়া ক্রমাগত উপরের দিকে ঠেলিয়া উঠিতেছে। দূরে চোখ পড়িয়া গেল-দৃষ্টি আর ফিরাইতে পারিলাম না। একবাব মনে হইল এ বুঝি পাহাড়, কিন্তু পবক্ষণেই সে ভ্রম যখন ভাঙ্গিল, তখন হাতজোড় করিয়া বলিলাম, ভগবান! এই চােখ দুটি যেমন তুমিই দিয়াছিলে, আজ তুমিই তাহাদের সার্থক করিলে । এতদিন ধরিয়া ত সংসারের সর্বত্র চোখ মেলিয়া বেড়াইতেছি ; কিন্তু তোমার এই সৃষ্টির তুলনা ত কখনও দেখিতে পাই নাই। যতদূর দৃষ্টি যায়, এই যে অচিন্তনীয় বিরাটকায় মহাতরঙ্গ মাথায় রজতশুভ্র কিরীট পরিয়া দ্রুতবেগে অগ্রসব হইয়া আসিতেছে, এত বড় বিস্ময় জগতে আর আছে কি!

সমুদ্রে ত কত লোকই যায় আসে ; আমি নিজেও তা আরও কতবার এই পথে যাতায়াত করিয়াছি; কিন্তু এমনটি ত আর কখনও দেখিতে পাইলাম না। তা ছাড়া চোখে না দেখিলে, জলের ঢেউ যে কোন গতিকেই