পাতা:শ্রীকান্ত - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/২০৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

হইবে। কিন্তু মিনিটখানেক পরে দেখা গেল, না-ডুবি নাই, জাহাজসুদ্ধ আবার জলের উপর ভাসিয়া উঠিয়াছি । অতঃপর তরঙ্গের পর তরঙ্গেরও আর শেষ হয় না । আমাদের নাগরদোলা-চাপারও আর সমাপ্তি হয় না । এতক্ষণে টের পাইলাম, কেন কাপ্তেন সাহেব মানুষগুলোকে, জানোয়ারের মত গর্তে পুরিয়া চাবি-বন্ধ করিয়াছেন। ডেকের উপর দিয়া মাঝে মাঝে যেন জলের স্রোত বহিয়া যাইতে লাগিল। আমার নীচে হাঁস ও মুরগিগুলা বারিকতক ঝটপট করিয়া এবং ভেড়াগুলা কয়েকবার ম্যা-ম্যা করিয়া ভাবলীলা সাঙ্গ করিল। আমি শুধু তাহদের উপরতলা আশ্ৰয় করিয়া লোহার খুটি সবলে জড়াইয়া ধরিয়া ভাবলীলা বজায় করিয়া চলিলাম। কিন্তু এখন আর-একপ্রকারের বিপদ জুটল। শুধু যে জলের ছাট ছুঁচের মত গায়ে বিধিতে লাগিল, তাই নয়, সমস্ত জাম-কাপড় ভিজিয়া প্ৰচণ্ড বাতাসে এমনি শীত করিতে লাগিল যে, দাঁতে দাতে ঠক ঠক করিয়া বাজিতে লাগিল। মনে হইল, জলে ডোবার হাত হইতে যদি বা সম্প্রতি নিস্তার পাই, নিমোনিয়ার হাত হইতে পরিত্ৰাণ পাইব কিরূপে ? এইভাবে আরও কিছুক্ষণ বসিয়া থাকিলে যে পরিত্রাণ পাওয়া সত্যই অসম্ভব হইয়া পড়িবে, তাহ নিঃসংশয়ে অনুভব করিলাম। সুতরাং যেমন করিয়া হোক, এ স্থান পরিত্যাগ করিয়া এমন কোথাও আশ্ৰয় লইতে হইবে, যেখানে জলের ছাট বল্লমের ফলার মত গায়ে না বেঁধে । একবার ভাবিলাম, ভেড়ার খাচার মধ্যে ঢুকিয়া পড়িলে কিরূপ হয় ? কিন্তু তাই বা কতটুকু নিরাপদ ? তার মধ্যে যদি সেইরূপ লোনা জলের স্রোত ঢুকিয়া পড়ে ৎ নিতান্তই যদি-না ম্যা-ম্যা করি, মা মা করিয়াও ইহলীলা সমাপ্ত করিতে হইবে। শুধু এক উপায় আছে। জাহাজের পার্শ্ব-পরিবর্তনের মধ্যে ছুট দিবার একটু অবকাশ পাওয়া যায় ; অতএব এই সময়টুকুর মধ্যে আর কোথাও গিয়া যদি ঢুকিয়া পড়িতে পারি, হয়ত বঁচিতেও বা পারি। যে কথা, সেই কাজ। কিন্তু খাঁচা হইতে অবতরণ করিয়া তিনবার ছুটিয়া ও তিনবার বসিয়া যদি-বা সেকেণ্ড ক্লাস কেবিনের দ্বারে গিয়া উপস্থিত হইলাম, দ্বার বন্ধ। লোহার কপাট হাজার ঠেলা-ঠেলিতেও পথ দিল না। সুতরাং