পাতা:শ্রীকান্ত - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/২০৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আবার সেই পথ তেমনি করিয়া অতিক্রম করিয়া-ফাস্ট ক্লাসের দোরগোড়ায় আসিয়া হাজির হইলাম। এবার ভাগ্যদেবতা সুপ্ৰসন্ন হইয়া একটা নিরালা ঘরের মধ্যে আশ্রয় দিলেন। লেশমাত্র না করিয়া কপাট বন্ধ করিয়া দিয়া খাটের উপর ঝুপ করিয়া শুইয়া পড়িলাম।

রাত্ৰি বারোটার মধ্যেই ঝড়-বৃষ্টি থামিয়া গেল বটে, কিন্তু পরদিন ভারবেলা পর্যন্ত সমুদ্রের রাগ পড়িল না।

আমার জিনিসপত্রেব এবং সহযাত্রীদের অবস্থা কি হইল, বিশেষ করিয়া মিস্ত্রী মহাশয় সস্ত্রীক কি করিয়া রাত্রি অতিবাহিত করিলেন, জানিবার জন্য সকালবেল নীচে নামিয়া গেলাম। কাল নন্দ মিস্ত্রী একটু রসিকতা করিয়াই বলিয়াছিল, “মশায়, সাড়েবত্রিশ ভাজার মত আমরা মিশিয়ে গিয়েছিলুম; এইমাত্র যে ষার কোটে ফিরে এসেছি।” আজিকার মিশামিশি সাড়েবত্ৰিশ ভাজায় চলে কি না, জানি না ; কিন্তু এখন পর্যন্ত কেহই যে কাহারও নিজের কোটে ফিরিয়া আসিতে পারেন। নাই, তাহা স্বচক্ষে দেখিলাম।

তাহাদের অবস্থা দেখিলে সত্যই কান্না পায় । এই তিন-চারশ’ যাত্রীর মধ্যে সমর্থ থাকা ত অনেক দূরের কথা, বোধ করি, অক্ষত কেহই ছিল না।

মেয়ের শিলের উপর নোড়া দিয়া যেমন করিয়া বাটনা বাটে, কল্যকার সাইক্লোন এই তিন-চার শত লোক দিয়া ঠিক তেমনি করিয়া সারারাত্রি বাটনা বাটিয়াছে। সমস্ত জিনিসপত্র, বাক্স পেটরা লইয়া এই লোকগুলি সমস্ত রাত্ৰি জাহাজের এ-ধার হইতে ও-ধারে গড়াইয়া বেড়াইয়াছে। বমি এবং অনুরূপ আরও দুটা প্ৰক্রিয়া এত করিয়াছে যে দুৰ্গন্ধ দাড়ানো ভার। এখন ডাক্তারবাবু জাহাজের মেথর ও খালাসীদের লষ্টয়া ইহাদের পঙ্কোদ্ধার কবিবার ব্যবস্থা করিতেছেন।

ডাক্তারবাবু আমার আপাদমস্তক বার-বার নিরীক্ষণ করিয়া বোধ করি আমাকে সেকেণ্ড-ক্লাসের যাত্রী ঠিক করিয়াছিলেন, তথাপি অত্যন্ত আশ্চৰ্য হইয়া বলিলেন, “মশাইকে ত খুব তাজা দেখাচ্চে ; বোধ করি একটা হ্যামক পেয়েছিলেন, না?"