পাতা:শ্রীকান্ত - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/২১১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8) šÀYVg সমস্ত আলাপ-আলোচনার মধ্যে কোথাও একটা অসংগতি বা অশোভন প্ৰগলভ্যতা ধরিতে পারিলাম না। অভয়ার মানুষ বশ করিবার আশ্চর্য শক্তি। ইহারই মধ্যে শুধু যে সে আমার নাম-ধাম জানিয়া লইল, তাহ নয়, তাহার নিরুদ্দিষ্ট স্বামীকে যেমন করিয়া পারি খুজিয়া দিব, তাহাও আমার মুখ দিয়া বাহির করিয়া লইল । তাহার স্বামী আট বৎসব পূর্বে বর্মায় চাকুরী করিতে আসিয়াছিল। বছর-দুই তাহার চিঠিপত্র পাওয়া গিয়াছিল, কিন্তু এই ছয় বৎসর আর কোন উদেশ নাই । দেশে আত্মীয়-স্বজন আর কেহ নাই । মা ছিলেন, তিনিও মাসখানেক পূর্বেই ইহলোক ত্যাগ করায় অভিভাবকহীন হইয়া বাপের বাড়িতে থাকা অসম্ভব হইয়া পড়ায়, রোহিণীদাদাকে রাজী করিয়া বৰ্মায় চলিয়াছে। একটুখানি চুপ করিয়া হঠাৎ বলিয়া উঠিল, আচ্ছা, এতটুকু চেষ্টা না করে কোনমতে দেশের বাড়িতে পড়ে থাকলেই কি আমার ভাল কাজ তাত ? তা ছাড়া, এ বয়সে দুর্নাম কিনতেই বা কতক্ষণ ? জিজ্ঞাসা করিলাম, কেন তিনি এতকাল আপনাব খোজ নেন না, কিছু জানেন ? না, কিছু জানিনে । তার পূর্বে কোথায় ছিলেন, তা জানেন ? জানি। রেঙ্গুনেই ছিলেন, বৰ্মা রেলওয়েতে কাজ করতেন ; কিন্তু কত চিঠি দিয়েছি, কখনো জবাব পাইনি। অথচ একটা চিঠিও কোনদিন আমার ফিরে আসেনি । প্ৰতি পত্ৰই যে অভয়ার স্বামী পাইয়াছে, তাহা নিশ্চয়। কিন্তু কেন যে জবাব দেয় নাই, তাহার সম্ভবতঃ হেতু এইমাত্র ডাক্তারবাবুর কাছেই শুনিয়াছিলাম। অনেক বাঙালীই সেখানে গিয়া, কোন সুন্দরী ব্ৰহ্ম-রিমণী লইয়া আবার নূতন করিয়া ঘর-সংসার পাতে। এমনও অনেক আছে, যাহারা সারাজীবন আর কখনো দেশে ফিরিয়াও যায় না। আমাকে চুপ করিয়া থাকিতে দেখিয়া অভয়া প্রশ্ন করিল, তিনি বেঁচে নেই, তাই কি আপনার মনে হয় ?