পাতা:শ্রীকান্ত - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/২২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

कांड्ड গেছে । আমরা সবাই না থাকলে এতদিন ওকে জেলে মেথরের ভাত খেতে হ’ত যে ! লক্ষ্মণের সম্বন্ধেও আমার কৌতুহল ছিল না, কিংবা হরি মোড়ল তাহার ডোমত্ব গোপন করিয়া কত বড় অন্যায় করিয়াছে, সে মীমাংসা করিবারও প্ৰবৃত্তি হইল না ; আমি শুধু ভাবিতে লাগিলাম, যে দেশে ভদ্রলোকেরা পর্যন্ত চর লাগাইয়া তাহার আজন্ম প্ৰতিবেশীর ছিদ্র অন্বেষণ করিয়া তাহার পিতৃশ্ৰাদ্ধ পণ্ড করিয়া দিয়া আত্মপ্ৰসাদ লাভ কবে, সেই দেশেব অশিক্ষিত ছোটলোক হইয়াও ইহার একজন অপরিচিত বাঙ্গালীর এত বড় মারাত্মক অপরাধও মাপ করিয়াছে এবং শুধু তাই নয়, পাছে এই প্ৰবাসে তাহাকে লজ্জিত ও হীন হইয়া থাকিতে হয় এই আশঙ্কায় সে কথা উত্থাপন পৰ্যন্ত করে নাই, এ অসম্ভব কি করিয়া সম্ভব হইল ! বিদেশী বুঝবে না বটে, কিন্তু আমরা ত বুঝিতে পারি, হৃদয়েব কতখানি প্ৰশস্ততা, মনের কত বড় ঔদাৰ্য ইহার জন্য আবশ্যক। এ যে শুধু তাহাদের দেশ ছাড়িয়া বিদেশে আসার ফল, তাহাতে আর সংশয়মাত্র নাই। মনে হইল, এই শিক্ষাই এখন আমাদের দেশের জন্য সকলেরা, চেয়ে বেশি প্রয়োজন। ঐ যে নিজের পল্লীটুকুর মধ্যে সারাজীবন বসিয়া কাটানো, মানুষকে সর্ববিষয়ে ছোট করিয়া দিতে এত বড় শত্রু বোধ করি কোন একটা জাতির আর নাই। যাক, বহুদিন পর্যন্ত আমি ইহাদের মধ্যে বাস করিয়াছি। কিন্তু আমার যে অক্ষর-পরিচয় আছে, এ সংবাদ যতদিন না। তাহারা জানিবার সুযোগ পাইয়াছে, শুধু ততদিনই আমি ইহাদের সহিত ঘনিষ্ঠভাবে মিশিবার সুযোগ পাইয়াছি ; তাহদের সকল সুখ-দুঃখের অংশ পাইয়াছি ; কিন্তু যে মুহুর্তে জানিয়াছে, আমি ভদ্রলোক, আমি ইংরাজি জানি, সেই মুহুর্তেই তাহারা আমাকে পর করিয়া দিয়াছে। ইংরাজি-জানা শিক্ষিত ভদ্রলোকের কাছে ইহারা আপদ-বিপদের দিনে আসেও বটে, পরামর্শ জিজ্ঞাসা করে, তাহাও সত্য ; কিন্তু বিশ্বাসও করে না, আপনার লোক বলিয়াও ভাবে না । আমি যে তাহাদিগকে ছোট বলিয়া মনে-মনে ঘূণা করি না, আড়ালে উপহাস করি না; দেশের এই কুসংস্কারটা তাহারা আজও কাটাইয়া উঠিতে পারে নাই। •