পাতা:শ্রীকান্ত - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/২৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

äArpfg tg কৌতুহল দমন করিতে পারিলাম না। অনতিদূরেই পখিপার্থে একখানি ছোট চায়ের দোকান দেখিয়া ঢুকিয়া পড়িলাম এবং এক বাট চা লইয়া ল্যাম্পের আলোকে সেই লেখাটুকু চোখের সম্মুখে মেলিয়া ধরিলাম। পেন্সিলের লেখা, কিন্তু ঠিক পুরুষমানুষের মত হস্তাক্ষর। প্ৰথমেই সে তাহার স্বামীর নাম এবং তঁহার পূৰ্বেকার ঠিকানা দিয়া নীচে লিখিয়াছে, আজ যাহা মনে করিয়া গেলেন, সে আমি জানি ; এবং বিপদে আপনাব উপর আমি কতখানি নির্ভর করিয়াছি, সেও আপনি জানেন । তাই আপনার ঠিকানা জানিয়া লইলাম। অভয়ার লেখাটুকু বার বার পড়িলাম ; কিন্তু ওই কয়টা কথা ছাড়া আর একটা কথাও বেশী আন্দাজ করিতে পারিলাম না। আজ তাহাদেব পরস্পরের ব্যবহার চোখে দেখিয়া যে-কোন একটা বাহিরের লোক যে কি মনে করবে, তাহা অভয়ার মত বুদ্ধিমতী রমণীর পক্ষে অনুমান করা একেবারেই কঠিন নয়। কিন্তু তথাপি সে সত্য-মিথ্যা সম্বন্ধে বিন্দুমাত্ৰ ইঙ্গিত করিল না। তাহার স্বামীর নাম ও ঠিকানা ত পূর্বেই শুনিয়াছি ; বিপদে আমার উপর নির্ভর করিতে ত তাহাকে বাবাংবাব চোখেই দেখিয়াছি ;- কিন্তু তার পরে ? এখন তঁহার অনুসন্ধান করিতে সে চায় কি না, কিংবা আর কোন বিপদ অবশ্যম্ভাবী বুঝিয়া সে আমার ঠিকানা জানিয়া লইলকোনটার আভাস পর্যন্ত তাহার লেখার মধ্যে হাতড়াইয়া বাহিব করিতে পারিলাম না। কথায়-বার্তায় অনুমান হয়, বোহিণীদা কোন একটা অফিসে চাকরি যোগাড় করিয়াছে। কি করিয়া করিল, জানি না।--তবে খাওয়াপরার দুশ্চিন্তাটা আপাততঃ আমার মত তাহদের নাই-সুচিও জোটে। তথাপি যে কি রকম বিপদের সম্ভাবনাটা আমাকে শুনাইয়া রাখিল এবং শুনাইবার সার্থকতাই বা কি, তাহা অভয়াই জানে। তথা হইতে বাহির হইয়া সমস্ত পথটা শুধু ইহাদের বিষয় ভাবিতে ভাবিতেই বাসায় আসিয়া উপস্থিত হইলাম। কিছুই স্থির হইল না ; শুধু এইটা আজ নিজের মধ্যে স্থির হইয়া গেল যে, অভয়ার স্বামী লোকটি যেই হোক এবং যেখানে যে-ভাবেই থাকুক, স্ত্রীর বিশেষ অনুমতি ব্যতীত ইহাকে সন্ধান করিয়া বাহির করার কৌতুহল আমাকে সংবরণ করিতেই হইবে।