পাতা:শ্রীকান্ত - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/২৪৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

SofG আমার সঙ্গে লেগে যেন তিনি দেখেন । আচ্ছা, বড় সাহেবের অর্ডারটা আজই বার ক’রে আমার হাতে দিতে পারা যায় না ? ন’টার গাড়িতেই চ’লে যৌতুম, রাত্তিরটা কষ্ট পেতে হ’ত না। কি বলেন ? হঠাৎ জবাব দিতে পারিলাম না। কারণ, খোসামোদ জিনিসটা এমন যে সমস্ত দুবভিসন্ধি জানিয়া বুঝিয়াও,-ক্ষুন্ন করিতে ক্লেশ বোধ হয়। উল্টা কথাটা মুখের উপর শুনাইয়া দিতে বাধ্য-বাধ ঠেকিতে লাগিল ; কিন্তু সে বাধা মানিলাম না । নিজেকে শক্ত করিয়াই বলিয়া ফেলিলাম, বড় সাহেবের হুকুম হাতে নিয়ে আপনাব লাভ নেই। আপনি আর কোথাও চাকরির চেষ্টা । দখবেন। এক মুহুতে লোকটা যেন কাঠ হইয়া গেল। খানিক পরে কহিল, ऊॐ श८न्न ? তার মানে, আপনাকে ডিসমিস করবার নোটাই আমি দেব। আমাব দ্বারা আপনার কোন সুবিধে হবে না । সে উঠিয়া দাড়াইয়াছিল, বসিয়া পড়িল। তাহার দুই চোখ ছলছল। কবিতে লাগিল,-হাত জোড় করিয়া কহিল, -বাঙালী হ’য়ে বাঙালীকে মারবেন না বাবু ; ছেলেপুলে নিয়ে আমি মারা যাবে। সে দেখবার ভার আমার উপরে নেই । তা ছাড়া, আপনাকে আমি জানিনে, আপনার সাহেবের বিরুদ্ধেও আমি যেতে পারব না । লোকটা একদৃষ্টি আমার মুখের দিকে চাহিয়া বোধ করি বুঝিল, কথাগুলা পরিহাস নয়। আরও খানিকক্ষণ চুপ করিয়া রহিল। তাহার পরেই অকস্মাৎ হাউমাউ করিয়া কঁাদিয়া উঠিল। কেরাণী, দারওয়ান, পিয়ন-যে যেখানে ছিল, এই অভাবনীয় ব্যাপারে অবাক হইয়া গেল । আমি নিজেও কেমন যেন লজ্জিত হইয়া পড়িলাম। তাহাকে থামিতে বলিযা কহিলাম, অভয়া আপনার জন্যেই বর্ময় এসেছে । দুশ্চরিত্র স্ত্রীকে আমি অবশ্য নিতে বলিনে, কিন্তু, আপনার সমস্ত কথা শুনেও যদি সে মাপ করে-তার কাছ থেকে চিঠি আনতে পারেন--আপনার চাকরি আমি বজায় রাখবার চেষ্টা দেখব । না হ’লে আর আমার সঙ্গে দেখা ক’রে লজ্জা দেবেন না-আমি মিছে কথা বলিনে !