পাতা:শ্রীকান্ত - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/২৬২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শ্ৰীকান্ত SR ন্যায়.বাস করা, না হয়, এই দাদাটি ছোট ভাইয়ের যে ব্যবস্থা করিল, তাহাই ঠিক । অথচ ধর্ম কথাটার যদি কোন অর্থ থাকে তা-সে। হিন্দুৱাই হোক, বা আর কোন জাতিরই হোক, এত বড় একটা নৃশংস ব্যাপার যে কি করিয়া ঠিক হইতে পারে, সে ত আমার বুদ্ধির অতীত। এই সকল কথা না হয় সময়মত চিন্তা করিয়া দেখিব, কিন্তু এই যে কাপুরুষটা আজি বিনাদোষে এই অনন্যনির্ভর নারীর পরম স্নেহের উপর বেদনার বোঝা চাপাইয়া, তাহাকে মুখ ভাঙচাইয়া পলায়ন করিল, এই আক্ৰোশটাই আমাকে যেন দগ্ধ করিতে লাগিল । পথের একধা { দিয়া চলিযাছি ত চলিয়াছি। বহুদিন পূর্বে একদিন অভয়ার পত্ৰ পঢ়িবার স্তন্য যে চায়ের দোকানে প্ৰবেশ করিয়াছিলাম, সেই দোকানদারটি বোধ করি আমাকে চিনিতে পারিয়া ডাক দিয়া কহিল, বাবুসাব, আইয়ে। হঠাৎ যেন ঘুম ভাঙ্গিয় দেখিলাম, এ সেই দোকান এবং ওই রোহিণীর বাসা । বিনা বাক্যে তাহার আহবানের মর্যাদ। রাখিয়া ভিতরে ঢুকিয়া এক পেয়ালা চা পান করিফ বাহির হইলাম। রোহিণীর দরজায় ঘা দিয়া দেখিলাম, ভিতব হইতে বন্ধ। কড়া ধবিয়া বার-দুষ্ট নাড়া দিতেই কপাট৷ খুলিয়া গেল । চাহিয়া দেখি সম্মুখে অভয়া । তুমি যে ? অভয়ার চোেখ-মুখ রাঙা হইয়া উঠিল ; এবং কোন জবাব না দিয়াই সে চক্ষের নিমেষে ছুটিয়া গিয তাহার ঘরে ঢুকিয়। খিল বন্ধ করিয়া দিল । কিন্তু লজ্জার যে মূতি সন্ধ্যার সেই অস্পষ্ট আলোকেও তাহার মুখের উপর ফুটিয়া উঠতে দেখিলাম, তাহাতে জিজ্ঞাসা করিবাব, প্রশ্ন করিবার আর কিছুই রহিল না। অভিভূতের ন্যায় কিছুক্ষণ দাড়াইয়া থাকিয়া নীরবে: ফিবিয যাইতেছিলাম।-অকস্মাৎ আমার দুষ্ট কানের মধ্যে যেন দু'রকম কান্নাব সুর একই সঙ্গে বাজিয়া উঠিল। একটা সেই পাপিষ্ঠের, অপরটা সেই বর্মী মেয়েটির । চলিয়া যাইতেছিলাম, কিন্তু ফিরিয়া আসিয়া তাহাদের প্ৰাঙ্গণের মাঝখানে দাড়াইলাম। মনে মনে বলিলাম, না, এমন করিয়া অপমান করিয়া আমার যাওয়া হইবে না । নাই,নাই-এমন বলিতে নাই,