পাতা:শ্রীকান্ত - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/২৬৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

R ävy সমস্ত জীবনটা পঙ্গ ক’রে দিযে আর আমি সতী নাম কিনতে চাইনে, শ্ৰীকান্তবাবু। হাত তুলিয়া অভয়া চোখের কোণ দুটা মুছিয়া ফেলিয়া অব দ্রুদ্ধ কণ্ঠে গৃহিল--একটা রাত্রির বিবাহ-অনুষ্ঠান যা স্বামী-স্ত্রী উভয়ের কাছেই স্বপ্নের মত মিথ্যা হয়ে গেছে, তাকে জোর ক’রে, সারাজীবন সত্য ব’লে খাড়া শাখবার জন্যে এই এত বড় ভালবাসাটা একেবারে ব্যর্থ ক’রে দেব ? যে বিধাতা ভালবাসা দিয়েছেন, তিনি কি তাতেই খুশি হবেন ? আমাকে আপনি যা ইচ্ছা হয়। ভাববেন, আমার ভাবী সন্তানদের আপনারা যা খুশি “ব’লে ডাকবেন, কিন্তু যদি বেঁচে থাকি শ্ৰীকান্তবাবু, আমাদের নিম্পাপ। ভালবাসার সন্তানবা মানুষ হিসাবে জগতে কারও চেয়ে ছোট হবে না-এ আমি আপনাকে নিশ্চয় ব’লে রাখলুম। আমার গর্ভে জন্মগ্রহণ করাটা তারা দুৰ্ভাগ্য বলে মনে করবে না। তাদের দিয়ে যাবার মত জিনিস তাদের বাপ-মায়ের হয় ত কিছুই থাকবে না ; কিন্তু তাদের মা তাদের এই বিশ্বাসটুকু দিয়ে যাবে যে, তারা সত্যের মধ্যে জন্মেচে, সত্যের বড় সম্বল সংসারে তাদের আর কিছু নেই। এই বস্তু থেকে ভ্ৰষ্ট হওয়া তাদের কিছুতেই চলবে না। তা হ’লে তারা একেবারেই অকিঞ্চিৎকর হয়ে যাবে । অভয়া চুপ করিল, কিন্তু সমস্ত আকাশটা আমার চোখের সম্মুখে কঁাপিতে লাগিল ; মুহুর্তকালের জন্য মনে হইল, এই মেয়েটির মুখের কথাগুলি যেন রূপ ধরিয়া বাহিরে আসিয়া আমাদের উভয়কে বিরিয়া দাড়াইয়া আছে। এমনিই বটে । সত্য যখন সত্যই মানুষের হৃদয় হইতে সম্মুখে উপস্থিত হয়, তখন মনে হয় যেন ইহারা সজীব ; যেন ইহাদের রক্ত-মাংস আছে ; যেন তার ভিতরে প্রাণ আছে ;-নাই বলিয়া অস্বীকার করিলে যেন আঘাত করিয়া বলিবে, চুপ কর। মিথ্যা তর্ক করিয়া অন্যায়ের সৃষ্টি করিও না । অভয়া সহসা একটা সহজ প্রশ্ন করিয়া বসিল ; কহিল, আপনি নিজে কি আমাদের অশ্রদ্ধার চক্ষে দেখবেন শ্ৰীকান্তবাবু? আর আমাদের বাড়িতে আসবেন না ?