পাতা:শ্রীকান্ত - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

छैकाख R. o» হাত পাছ-ছয় দূরে বনের মধ্য হইতে সাডা আসিল, আমি নীচে । নীচে কেন ? ডিঙি টেনে বের করতে হবে। আমার কোমরে দডি বাধা আছে । টেনে কোথায় বার করবে ? ও গঙ্গায় । খানিকটা যেতে পারলেই বড় গাঙে পড়ব । শুনিয়া চুপ করিয়া গেলাম। ক্ৰমশঃ ধীরে ধীরে অগ্রসর হইতে লাগিলাম। অকস্মাৎ কিছুদূরে বনের মধ্যে ক্যানান্ত্রা-পিটানো ও চেরা বাঁশের কটাকটি শব্দে চমকাইয়া উঠিলাম। সভয়ে জিজ্ঞাসা করিলাম, ও কি ভাই ? সে উত্তর দিল, চাষীরা মাচার উপবে বসে বুনো শূয়ার তাড়াচ্ছে। • বুনো শূয়ার। কোথায় সে ? ইন্দ্ৰ নৌকা টানিতে টানিতে তাচ্ছিল্যাভরে কহিল, আমি কি দেখতে পাচ্ছি যে বলব ? অাছেই কোথাও এইখানে । জবাব শুনিয়া স্তব্ধ হইয়া রহিলাম, ভাবিলাম, কা’র মুখ দেখিয়া আজ প্ৰভাত হইয়াছিল ! সন্ধ্যারাত্রে আজই ঘরের মধ্যে বাঘের হাতে পড়িয়াছিলাম। এ জঙ্গলে যে বুনো শূয়ারের হাতে পডিব, তাহাতে আর বিচিত্র কি ? তথাপি আমি ত নৌকায় বসিয়া ; কিন্তু ঐ লোকটি এক-বুক কাদা ও জলের মধ্যে এই বনের ভিতরে-এক-পা নড়িবার চড়িবার উপায় পৰ্যন্ত তাহার নাই । মিনিট পনের এইভাবে কাটিল । আর একটা জিনিষ লক্ষ্য করিতেছিলাম। প্রোয়ই দেখিতেছি, কাছাকাছি এক একটা জনার ভুট্টাগাছের ডগা ভয়ানক আন্দোলিত হইয়া “ছপাৎ’ করিয়া শব্দ হইতেছে। একটা প্ৰায় আমার হাতের কাছেই । সশঙ্কিত হইয়া সেদিকে ইন্দ্রের মনোযোগ আকৃষ্ট করিলাম। ধাড়ী শূয়াব না হইলেও বাচ্চ টাচ্চ নয় তা । ইন্দ্ৰ অত্যন্ত সহজভাবে কহিল, ও কিছু না-সাপ জডিয়ে আছে, তাড়া পেয়ে জলে ঝাপিয়ে পড়ছে। কিছু না-সাপ ! শিহরিয়া নৌকার মাঝখানে জড়সড় হইয়া বসিলাম । অক্ষুটে কহিলাম, কি সাপ, ভাই ? ইন্দ্ৰ কহিল, সব রকম আছে। ঢোঁড়া, বোড়া, গোখরো, করেত-জলে ভেসে এসে গাছে জড়িয়ে আছে-কোথাও ডাঙা নেই দেখচিস নে ?