পাতা:শ্রীকান্ত - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/২৮৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ễsvg গুরুদেব বলিলেন, না মা ; বাইরে থেকে যেমনই দেখাক, তাদের ফল সমান নয়। তা হ’লে সংসারে সবলে-দুর্বলে কোন প্ৰভেদ থাকত না। যে বিষ পাঁচ বছরের শিশুর পক্ষে মারাত্মক, সেই বিষ যদি একজন ত্রিশ বছলের লোককে মারতে না পারে ত কাকে দোষ দেবে মা ? কিন্তু আজই যদি আমার কথা বুঝতে না পারো ত অন্ততঃ এটি স্মরণ রেখো যে, যাদের ভিতরে আগুন জ্বলিছে, আর যাদের শুধু ছাই জমা হয়ে আছে-তাদের কর্মের ওজন এক তুলাদণ্ডে কব৷ যায় না। গেলেও তা ভুল হয়। শ্ৰীকান্তদা, তোমার চিঠি পড়িয়া আজ আমার গুরুদেবের সেই অন্তরের আগুনের কথাই মনে পড়িতেছে। অভয়াকে চক্ষে দেখি নাই, তবুও মনে হইতেছে।--তার ভিতরে যে বহ্নি জ্বলিতেছে, তাহার শিখার আভাস তোমার চিঠির মধ্যেও যেন দেখিতে পাইতেছি। তার কর্মের বিচার একটু সাবধানে করিও । আমাদের মত সাধারণ স্ত্রীলোকের বাটখারা লইয়া তীব পাপ-পুণ্যের ওজন তাড়াতাড়ি সারিয়া দিয়া বসিও না। চিঠিখান অভয়ার হাতে দিয়া বলিলাম, রাজলক্ষ্মী তোমাকে শত সহস্ৰ নমস্কার জানাইয়াছো--এই নাও । অভয়া দুই-তিনবার করিয়া লেখাটুকু পড়িয়া কোনমতে তাহা আমার বিছানার উপর ছুড়িয়া ফেলিয়া দিয়া দ্রুতবেগে বাহির হইয়া গেল । সংসারের চক্ষে তাহার যে নারীত্ব আজি লাঞ্ছিত, অপমানিত, তাহারই উপরে শত-যোজন দূর হইতে যে অপরিচিত নারী আজ অযাচিত সম্মানের পুষ্পাঞ্জলি অৰ্পণ করিয়াছে, তাহারই অপরিসীম আনন্দ-বেদনাকে সে পুরুষের দৃষ্টি হইতে তাড়াতাড়ি আড়াল করিয়া লইয়া গেল। প্ৰায় আধঘণ্টা পরে অভয়া বেশ করিয়া চোখমুখ ধুইয়া ফিরিয়া আসিয়াই কহিল, শ্ৰীকান্তদাদা বাধা দিয়া বলিলাম, ও আবার কি ! দাদা, হলুম কবে ? আজ থেকে । না, না, দাদা নয়-দাদা নয়। সবাই মিলে সব দিক থেকে আমার রান্ত বন্ধ করো না । অভয়া হাসিয়া কহিল, মনে মনে বুঝি এই সব মতলব আঁটা হচ্ছে ?