পাতা:শ্রীকান্ত - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৩৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

awig 8. ছিল, বস্ত্র ছিল, ধৰ্ম্ম ছিল-তখনও বোধ হয় দেশের নিরানন্দ এমন” ভয়ঙ্কর শূন্যতায় আকাশ ছাপাইয়া ভগবানের দ্বারা পৰ্য্যন্ত ঠেলিয়া উঠে নাই। দুই চক্ষু জলে ভরিয়া গেল, গাড়ীর চাকা হইতে কতকটা ধূলা লইয়া তাড়াতাড়ি মাথায় মুখে মাখিয়া ফেলিয়া মনে মনে বলিতে লাগিলাম, হে আমার পিতৃ-পিতামহের সুখে-দুঃখে, বিপদে-সম্পদে, হাসি-কান্নায় ভরা ধূলাবালির পথ, তোমাকে বার বার নমস্কার করি । অন্ধকাৰ বােনর মধ্যে চাহিয়া বলিলাম, মা জন্মভূমি ! তোমার বহুকোটী আকৃতি সন্তানেব মত আমিও কখনো তোমাকে ভালবাসি নাই-আর কোনদিন তোমাৰ সেবায় তোমার কাজে, তোমারই মধ্যে ফিরিয়া আসিব কিনা জানি না, কিন্তু আজ এই নির্বাসনের পথে আঁধারের মধ্যে তোমার যে দুঃখের মুক্তি আমার চোখের জলেৰ ভিতব দিয়া অস্পষ্ট হইয়া ফুটিয়া উঠিল, সে এ জীবনে কখনো ভুলিব না। চাহিয়া দেখিলাম রাজলক্ষ্মী তেমনি স্তিব হইয়া আছে । আঁধার কোণের মধ্যে তাহাব মুখ দেখা গেল না, কিন্তু অনুভব করিলাম। সে চোখ মুদিয়া যেন চিন্তাব মধ্যে মগ্ন হইয়া গেছে। মনে মনে বলিলাম, তাই যাক । আজ হইতে নিজের চিন্তা-তরণীর হালখানা যখন তাহাবই হাতে ছাড়িয়া দিয়াছি, তখন এই অজানা নদীর কোথায় ঘূর্ণি, কোথায় চড়া সেই খুজিয়া বাহির করুক। এ জীবনে নিজের মনটাকে আমি নানা দিকে নানা অবস্থায় যাচাই করিয়া দেখিয়াছি। ইহাব ধাতটা আমি চিনি। অত্যন্ত কিছুই ইহার সহে না । অত্যন্ত সুখ, অত্যন্ত স্বাস্থ্য, অত্যন্ত ভাল থাকা ইহাকে চিবদিন পীড়িত করে। কেহ অত্যন্ত ভালবাসিয়াছে জানিবা মাত্ৰই যে মন অহরহ পালাই পালাই করে, সে মন যে আজ কত দুঃখে হাল ছাড়িয়াছে, তাহা এ মনের সৃষ্টিকৰ্ত্তা ছাড়া আর কে জানিবে । বাহিরের কালো আকাশের প্রতি একবার দৃষ্টি প্রসারিত করিলাম, ভিতরের অদৃশ্য-প্ৰায় নিশ্চল প্ৰতিমার দিকেও একবার চক্ষু ফিরাইলাম, তাহার পরে জোড়হাতে আবার কাহাকে নমস্কার করিলাম জানি না, কিন্তু মনে মনে বলিলাম ইহার আকর্ষণের দুঃসহ বেগ আমার নিশ্বাস রুদ্ধ করিয়া