পাতা:শ্রীকান্ত - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৩৪৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শ্ৰীকান্ত এর কি ধার ধারে ? এর ভেতরের এত বড় বেদনাকে অনুভব করাই কি তার সাধ্য ? বরঞ্চ শিকার করার মত আঘাত দিতে পারাতেই যেন তার বড় আনন্দ ! তোমার দেওয়া অনেক দুঃখই কেবল এই ভেবে আমি সইতে পেরেছি। এবার চুপ করিয়া থাকার পালা আমার। তাহার অভিযোগের মূলে যুক্তি লইয়া বিচার চলিতে পারিত, সাফাই দিবার নজিরেরও হয়ত অভাব হইত না, কিন্তু সমস্ত বিড়ম্বন বলিয়া মনে হইল। তাহার সত্য অনুভূতির কাছে মনে মনে আমাকে হার মানিতে হইল। কথাটাকে সে ঠিকমত বলিতে পারে নাই, কিন্তু সঙ্গীতের যে অন্তরতম মূৰ্ত্তিটি কেবল ব্যথার ভিতর দিয়াই কদাচিৎ আত্মপ্ৰকাশ করে, সেই করুণায় অভিনিষিক্ত সদাজাগ্ৰত চৈতন্যই যেন রাজলক্ষ্মীর ঐ দুটা কথার ইঙ্গিতে রূপ ধরিয়া দেখা দিল, এবং তাহার সংযম, তাহার ত্যাগ, তাহার হৃদয়ের শুচিত। আবার একবার যেন আমার চোখে আঙ্গল দিয়া তাহাকেই স্মরণ कझांझेशू ख्रिव्ल । তথাপি একটা কথা তাহাকে বলিতেও পারিতাম । বলিতে পারিতাম মানুষের একান্ত বিরুদ্ধ প্ৰবৃত্তিগুলা যে কি করিয়া একই সঙ্গে পাশাপাশি বাস করে সে এক অচিন্তানীয় ব্যাপার । না হইলে আমি স্বহস্তে জীবহত্যা করিতে পারি, এত বড় পরমাশ্চৰ্য নিজের কাছে আর আমার কি আছে ? যে একটা পিপীলিকার মৃত্যু পৰ্যন্ত সহিতে পারে না, রক্ত-মাখি যুপকাষ্ঠের চেহারা যাহার আহার নিদ্রা কিছুদিনের মত ঘুচাইয়া দিতে পারে, যে পাড়ার অনাথ আশ্রয়হীন কুকুর-বেড়ালের জন্য ছেলেবেলায় কতদিন নিঃশব্দে উপবাস করিয়াছে, তাহার বনের পশু, গাছের পাখীর প্রতি লক্ষ্য যে কি করিয়া স্থির হয়, এ ত কিছুতেই ভাবিয়া পাই না। আর এ কি শুধু কেবল আমিই এমনি ? যে রাজলক্ষ্মীর অন্তর বাহির আমার কাছে আজ। আলোর ন্যায় স্বচ্ছ হইয়া গেছে, সে কেমন করিয়া এতদিন বৎসরের পর বৎসর ব্যাপিয়া পিয়ারীর জীবন যাপন করিতে পারিল ! এই কথাটাই মনে আনিয়াও মুখে আনিতে পারিলাম না। কেবল তাহাকে ব্যথা দিব না বলিয়াই নয়, ভাবিলাম কি হইবে বলিয়া ? দেব ও