পাতা:শ্রীকান্ত - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৩৪৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

क†ख এমন-কি দেশ ত্যাগ করিয়া বহুদূরে চলিয়া গিয়াছি-জীবনে আর না দেখা হয় ; কিন্তু আমার সকল চেষ্টাই একটা গোল বস্তুর উপর সরল রেখা টানিবার মত বারংবার কেবল ব্যর্থ হইয়াই গিয়াছে। আপনাকে সহস্ৰ বিষ্কার দিয়া নিজের দুর্বলতার কাছেই পরাজিত হইলাম, এই কথাটা মনে কবিয়া অবশেষে যখন আত্মসমৰ্পণ করিলাম, তখন রতন আসিয়া আজি আমাকে এই খবরটা দিয়া গেল, বাজলক্ষ্মী যাদু-মন্ত্র জানে । তাই বটে ! অথচ, এই রতনকেই জেবা কবিলেই জানা যাইবে সে নিজেও ইহা বিশ্বাস কবে না । হঠাৎ দেখি মস্ত একটা পাথবের বাটিতে কি কতকগুলো লইয়া এই পথেই বাজলক্ষ্ম ব্যস্ত হইয়া নীচে চলিয়াছে । ডাকিয়া কহিলাম, শোনো, সবাই বলে তুমি নাকি যাদু-মন্ত্র জানো ? ջ সে থমকিয়া দ ড়াইয়া দুই ভ্ৰ কুঞ্চিত করিয়া কহিল, কি জানি ? বলিলাম, যাদু-মন্ত্ৰ ! বাজলক্ষ্মী মুখ টিপিয়া একটু হাসিয়া কহিল, হ্যা, জানি। বলিয়া চলিয়া যাইতেছিল, হঠাৎ আমার গায়ের জামাটা ঠাওর করিয়া দেখিয়া উদ্বিগ্ন কণ্ঠে প্রশ্ন করিল, ওটা কালকের সেই বাসি জামাটা না ? নিজের প্রতি দৃষ্টিপাত করিয়া বলিলাম, হ্যা, সেটাই বটে, কিন্তু থাক, বেশ ফর্সা আছে । বাজলক্ষ্মী কহিল, ফর্সার কথা নয়, পরিষ্কারের কথা বলছি। তার পরে একটুখানি হাসিয়া বলিল, বাইরের ওই দেখান ফর্সাটা নিয়েই চিরকাল গেলে । ওটা তাচ্ছিল্য করতেও আমি বলি নে, কিন্তু যে ভেতরটা ঘামে ঘামে নোঙর হয়ে ওঠে সেটা দেখতে শিখবে কবে ? এই বলিয়া সে রতনকে ডাক দিল । কেহই জবাব দিল না। কারণ, কত্রীর এই প্ৰকাৱা উচ্চ মধুর আহবানের সাড়া দেওয়া এ বাড়ীর বিধি নয়, বরঞ্চ মিনিট পাঁচ-ছয় গা ঢাকা দিয়া থাকাই নিয়ম। রাজলক্ষ্মী তখন হাতের পাত্রটা নামাইয়া রাখিয়া পাশের ঘর হইতে একটা কাচা জামা আনিয়া আমার হাতে দিয়া কহিল, তোমার মন্ত্রী রতনকে বোলো যতক্ষণ সে যাদু-মন্ত্র না শিখছে ততক্ষণ যেন এই দরকারী কাজগুলো