পাতা:শ্রীকান্ত - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৩৫১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

t जैकाल "ঋরিবে কি, প্রবেশের পথই পায় নাই! তাইত তাহার একটা পাপড়িও খসে নাই, এতটুকু ধুলাবালিও উড়িয়া গিয়া আজও তাঁহাকে স্পর্শ করিতে পারে নাই । শীতের সন্ধ্যা অচিরে গাঢ় হইয়া আসিল, আমি কিন্তু সেইখানে বসিয়া ভাবিতেই লাগিলাম। মনে মনে বলিলাম, মানুষ ত কেবল তাহার দেহটাই নয় । পিয়ারী নাই, সে মরিয়াছে ; কিন্তু একদিন যদি সে তার ওই দেহটার গায়ে কিছু কালি দিয়াই থাকে ত সেটুকুই কি কেবল বড় করিয়া দেখিব, আর রাজলক্ষ্ম। যে তাহার সহস্ৰ কোটি দুঃখের অগ্নিপরীক্ষা পার হইয়া আজি তাহার। অকলঙ্ক শুভ্রতার সম্মুখে আসিয়া দাড়াইল, তাহাকে মুখ ফিরাইয়া বিদায় দিব ! মানুষের মধ্যে যে পশু আছে, কেবল তাঁহারই অন্যায়, তাহারই ভুল-ভ্ৰান্তি দিয়া মানুষের বিচার করিব, আর যে দেবতা সকল দুঃখ, সকল ব্যথা, সকল অপমান নিঃশব্দে বহন করিয়াও আজি সম্মিত মুখে তাহারই মধ্যে আত্মপ্ৰকাশ করিলেন, তঁহাকে বসিতে দিবার কোথাও আসন পাতিয়া দিব না ? সেই কি মানুষের সত্যকার বিচার হইবে ? আমার মন যেন আজ তাহার সকল শক্তি দিয়া বলিতে লাগিল, না না, এ কখনই না ! এ কখনই না ! এমন যে হইতেই পারে না । সে বেশি দিন নয়, নিজেকে দুর্বল, শ্ৰান্ত ও পরাজিত ভাবিয়া রাজলক্ষ্মীর হাতে • “একদিন আপনাকে সমর্পণ করিয়াছিলাম, কিন্তু সেদিন সেই পরাভূতের আত্মত্যাগের মধ্যে বড় একটা দীনতা ছিল। আমার মন যেন কিছুতেই অনুমোদন করিতে পারিতেছিল না ; কিন্তু আজ আমার সেই মন যেন সহসা সবলে এই কথাটাই বার বার করিয়া বলিতে লাগিল, ও দান দানই নয়, ও ফাকি। যে পিয়ারীকে তুমি জানিতে না, সে তোমার জানার বাহিরেই পড়িয়া থাক ; কিন্তু যে রাজলক্ষ্মী একদিন তোমারই ছিল, আজ ৬ মহাকেই তুমি সকল চিত্ত দিয়া গ্ৰহণ কর, এবং র্যাহার হাত দিয়া সংসারে সকল সার্থকতা নিরন্তর ঝরিতেছে, ইহারও শেষ সার্থকতা তাঁহারই হাতে *নির্ভর করিয়ান নিশ্চিন্ত হও । নূতন চাকরিট আলো আনিতেছিল; তাহাকে বিদায় দিয়া অন্ধকারেই বসিয়া রহিলাম, মনে মনে কহিলাম, রাজলক্ষ্মীর সকল ভাল সকল ।