পাতা:শ্রীকান্ত - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

R শ্ৰীকান্ত যে মাছের উপর, তাই বা কে বলিল ? মানুষের ঘাড় মটকাইয়া ঈষদুষ্ণ রক্তপান এবং মাংস-চর্বণের ইতিহাসও ত শোনা গিয়াছে । অনুকুল স্রোত এবং বোটেব তাড়নায় ডিঙিখানা তার তরু করিয়া অগ্রসর হইয়া আসিতে লাগিল। আরও কিছুদূর আসিতেই দক্ষিণদিকেব আগ্রীবমগ্ন বনবাউ এবং কসাড় বন মাথা তুলিয়া, এই দুটি অসমসাহসী মানবশিশুর পানে বিস্ময়স্তব্ধভাবে চাহিয়া রহিল এবং কেহ বা মাঝে মাঝে শিরশ্চিালনে কি যেন নিষেধ জানাইতে লাগিল। বাম দিকেও তাহাদের আত্মীয় পরিজনেরা সু-উচ্চ কঁাকরের পাড় সমাচ্ছন্ন করিয়া তেমনি করিয়াই চাহিয়া রহিল এবং তেমনি করিয়া মানা করিতে লাগিল। আমি এক হইলে নিশ্চয় তাহদের সঙ্কেত অমান্য করিতাম না । কিন্তু কৰ্ণধার যিনি, র্তাহার কাছে বোধ করি। “রামনামে’র জোরেই ইহাদের সমস্ত আবেদননিবেদন একেবারেই ব্যর্থ হইয়া গেল। সে কোনদিকে ভ্ৰক্ষেপই করিল। না। দক্ষিণদিকের চরের বিস্তৃতিবশতঃ এজায়গাটা একটি ছোটখাটে; হ্রদের মত হইয়াছিল-শুধু উত্তরদিকের মুখ খোলা ছিল। জিজ্ঞাসা করিলাম, আচ্ছা ডিঙি বেঁধে উপরে উঠবার ত ঘাট নেই, তুমি যাবে কি ক’রে ? ইন্দ্ৰ কহিল, ঐ যে বটগাছ, ওর পাশেতেই একটা সরু ঘাট আছে। কিছুক্ষণ হইতে কেবল একটা দুৰ্গন্ধ মাঝে মাঝে হাওয়ার সঙ্গে নাকে আসিয়া লাগিতেছিল । যত অগ্রসর হইতেছিলাম, ততই সেটা বাড়িতেছিল। এখন হঠাৎ একটা দমকা বাতাসের সঙ্গে সেই দুৰ্গন্ধটা এমন বিকট হইয়া নাকে লাগিল যে, অসহ বোধ হইল। নাকে কাপড় চাপা দিয়া বলিলাম, নিশ্চয় কি পচেছে, ইন্দ্ৰ । ইন্দ্ৰ বলিল, মড়া। আজকাল ভয়ানক কলেরা হচ্ছে বিনা । সবাই ত পোড়াতে পারে না-মুখে একটুখানি আগুন ছুইয়ে ফেলে দিয়ে যায়। শিয়াল-কুকুরে খায় আর পচে । তারই অতি গন্ধ। কোনখানে ফেলে দিয়ে যায় ভাই । ঐ হোথা থেকে হেথা পৰ্যন্ত-সবটাই শ্মশান। কিনা । যেখানে হোক ফেলে রেখে, ঐ বটতলার ঘাটে চান ক’রে বাড়ী চলে যায়-আরে দূর।