পাতা:শ্রীকান্ত - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৩৮৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8 ዓ রাজলক্ষ্মী উঠিয়া আসিয়া তাহা গ্ৰহণ করিল এবং পুলকিত চিত্তে কহিল, মেয়ের বিয়েতে এই বুঝি দিতে হয় ! রতন কহিল, না মা, তা নয়, যার যেমন সাধ্য সে তেমনি জমিদারকে দেয়, এরা ছোটজাত ডোম, এর বেশি আর কোথায় কি পাবে বলুন, এই কত কষ্টে কিন্তু নিবেদন সমাপ্ত হইবার পূর্বেই টাকাটা ডোমের শুনিয়া রাজলক্ষ্মী তাড়াতাড়ি বাখিয়া দিয়া বলিল, তবে থাক থাক, এ-ও দিতে হৰে না-তোম^ এমনিই মেয়েব বিয়ে দাও গো এই প্ৰত্যাখানে কন্যােব পিতা এবং ততোধিক রতন নিজে বিপদগ্ৰস্ত হইয়া উঠিল ; সে নানা প্রকারে বুঝাইবার চেষ্টা করিতে লাগিল যে, এই বা জবাবণের সম্মানটা গ্ৰহণ না করিলে কোন মতেই চলিবে না । রাজলক্ষ্মী কেন যে ঐ সুপারিসুদ্ধ টাকাটা লইতে কিছুতেই চাহে না, ঘরের ভিতর বসিয়া আমি তাহা বুঝিয়াছিলাম, এবং রতনই বা কিজান্য যে সনির্বন্ধ অনুরোধ কবিতেছিল তাহাও আমার অবিদিত ছিল না। খুব সম্ভব দেয় টাকাটা আরও বেশি এবং গোমস্ত কুশারী-মহাশয়ের হাত হইতে নিস্তার পাইবার জন্যই ইহার এ কৌশল করিয়াছে ; এবং রতন ‘হুজুর’ ইত্যাদি সম্ভাষণের পরিবৰ্ত্তে তাহদের মুখপাত্ৰ হইয়া আজি পেশ কবিতে আসিয়াছে। সে যে যথেষ্ট আশ্বাস দিয়াই আনিয়াছে, তাহাতে সন্দেহমাত্ৰ নাই। তাহার এই সঙ্কট অবশেষে আমিই মোচন করিলাম। উঠিয়া আসিয়া টাকাটা তুলিয়া কহিলাম, আমি নিলাম, তোমরা বাড়ী গিয়ে বিয়ের উদ্যোগ করা গে। রতনের মুখ গর্বে উজ্জল হইয়া উঠিল, এবং রাজলক্ষ্মী অস্প শ্যের প্রতিগ্রহের দায় হইতে পরিত্রাণ পাইয়া হাফ ফেলিয়া বঁচিল। খুলী হইয়া কহিল, এ ভালই হ’ল যে, যার মান্য তিনি স্বহস্তে নিলেন, এই বলিয়া সে হাসিল । মধু ডোম কৃতজ্ঞতায় পরিপূর্ণ হইয়া হাতজোড় করিয়া কহিল, হুজুর, পহর রেতের মধ্যেই লগন, একবার যদি পায়ের ধূলো দেন। এই বলিয়া সে একবার আমার ও একবার রাজলক্ষ্মীর মুখের প্রতি করুণ চক্ষে চাহিয়া রহিল।