পাতা:শ্রীকান্ত - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৩৯৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

༤ অ’মি কিছু আশ্চৰ্য্য হইয়া কুশারীগৃহিণীর মুখের প্রতি চোখ খুলিয়া চাহিলাম। পল্লীগ্রামে, বিশেষ এইরূপ সুদূৰ পল্লীতে ঠিক এমনি সহজ সুন্দর কথাগুলি যেন কোন বমণীর মুখেই শুনিবার কল্পনা করি নাই ; কিন্তু এখনও যে এই পল্লী-অঞ্চলেই আরও একটি ঢের বেশি আশ্চৰ্য্য নারীর পরিচয় পাইতে বাকি ছিল, তাহা স্বপ্নেও ভাবি নাই । আমার পরিবেশনের ভার বিধবা কন্যার উপর অর্পণ করিয়া কুশারীগৃহিণী তালপাখা হাতে আমার সুমুখে বসিয়াছিলেন। বোধ হয়, বয়সে আমার অনেক বড় হইবেন। বলিয়াই মাথার উপব অঞ্চলখানি ছাড়া মুখে কোন আবরণ ছিল না। তাহা সুন্দব কি অসুন্দর, মনেই হইল না, কেবল এইটুকুই মনে হইল, ইহা সাধারণ বাঙালী মায়ের মতই স্নেহ-করুণায় পরিপূর্ণ। দ্বারের কাছে কৰ্ত্তা স্বয়ং দাড়াইয়া ছিলেন, বাহির হইতে তাহার মেয়ে ডাকিয়া কহিল, বাবা, তোমার খাবার দেওয়া হয়েছে। বেলা অনেক হইয়াছিল, এবং এই খবরটুকুর জন্যই বোধ হয় তিনি সাগ্রহে অপেক্ষা করিতেছিলেন ; তথাপি একবার বাহিরে ও একবার আমাব প্ৰতি দৃষ্টিপাত করিয়া কহিলেন, এখন একটু থাক মা, বাবুব খাওয়াটা গৃহিণী তৎক্ষণাৎ বাধা দিয়া বলিয়া উঠিলেন, না, তুমি যাও, মিথ্যে ওসব নষ্ট ক’রো না । ঠাণ্ডা হয়ে গেলে তোমার খাওয়া হয় না। আমি জানি । কুশারী সঙ্কোচ বোধ করিতেছিলেন, কহিলেন, নষ্ট আর কি হবেবাবুর খাওয়াটা হয়েই যাক না। গৃহিণী কহিলেন, আমি থাকতেও যদি খাওয়ার ত্রুটি হয় তা তোমার দাড়িয়ে থাকলেও সারবে না। তুমি যাও-কি বল বাবা ? এই বলিয়া তিনি আমার প্রতি চাহিয়া হাসিলেন । আমিও হাসিয়া বলিসাম, হয়ত ক্ৰটি বাড়বে। আপনি যান কুশারী-মশায়, অমন অভুক্ত চেয়ে দাড়িয়ে থাকলে কোন পক্ষেই সুবিধে হবে না। তিনি আর বাক্যব্যয় না করিয়া ধীরে ধীরে চলিয়া গেলেন, কিন্তু মনে হইল সন্মানিত অতিথির আহারের স্থানে উপস্থিত না থাকিবার সঙ্কোচটা সঙ্গে লইয়াই গেলেন ; কিন্তু এইটাই যে আমার মন্ত ভুল হইয়াছিল। তাহা কিছুক্ষণ