পাতা:শ্রীকান্ত - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৪০৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ArrfU তাকে যদি ফিরিয়ে না দেন ত আমি বেঁচে থেকে এই মহাপাপের একটা অল্পও আমার স্বামী-পুত্ৰকে খেতে দিতে পারব না । আমার মনে হ’ল বাবা, হয়। আমি স্বপন দেখছি, না হয়। সুনন্দাকে ভূতে পেয়েছে। যে ভাশুরকে সে দেবতার বেশি ভক্তি করে, তাকেই এই কথা । উনি খানিকক্ষণ বাজাহতের মত বসে রইলেন ; তার পর জ্বলে উঠে বললেন, বিষয় পাপের হোক, পুণ্যের হোক, সে আমার, তোমার স্বামী-পুত্রের নয়। তোমাদের না পোষায়, তোমরা আর কোথাও যেতে পার! কিন্তু বৌমা, তোমাকে আমি এতকাল সবৰ্ব্বগুণময়ী ব’লেই জানতাম, কখনো এমন ভাবি নি। এই ব’লে তিনি আসন ছেড়ে উঠে চলে গেলেন ঐ সেদিন সমস্ত দিন আর কারও মুখে ভাত গেল না । কেঁদে গিয়ে ঠাকুরপোর কাছে পড়লাম ; বললাম, ঠাকুরপো, তোমাকে যে আমি কোলে ক’রে মানুষ করেছি--তার এই প্ৰতিফল ! ঠাকুরপোর চোখ-দুটো জলে ভরে গেল, বললে, বৌঠান, তুমিই আমার মা, দাদাও আমাব পিতৃতুল্য ; কিন্তু তোমাদের বড় যে, সে ধৰ্ম্ম। আমাবও বিশ্বাস সুনন্দ একটা কথাও অন্যায় বলে নি । শ্বশুরমশায় সন্ন্যাসগ্রহণের দিন তাকে আশীকবাদ ক’রে বলেছিলেন, মা, ধৰ্ম্মকে যদি সত্যই চাও, তিনিই তোমাকে পথ দেখিয়ে নিয়ে যাবেন। আমি তাকে এতটুকু বয়স থেকে চিনি বৌঠান, সে কখখনো ভুল করে নি। হারে, পোড়া কপাল ! তাকেও যে পোড়ারমুখী ভেতরে ভেতরে এত বেশ ক’রে রেখেছিল, আজ আমার তায় চোখ খুলল। সেদিন ভান্দ্রের সংক্রান্তি, আকাশ মেঘাচ্ছন্ন-থেকে থেকে ঝর কাের ক’রে জল পড়ছে, কিন্তু হতভাগী একটা রাত্তিরের জন্যেও আমাদের মুখ রাখলে না, ছেলের হাত ধরে বাড়ী থেকে বেরিয়ে গেল। আমার শ্বশুরের কালের একঘর প্ৰজা মরে হেজে বছর দুই হ’ল চলে গেছে, তাদেরই ভাঙা ঘর একখানি তখনাে কোনমতে দাঁড়িয়ে ছিল ; শিয়াল-কুকুর সাপ-ব্যাঙের সঙ্গে তাতেই গিয়ে সেই দুদিনে আশ্ৰয় নিলে। উঠোনের জল-কাদা মাটির ওপর লুটিয়ে পড়ে কেঁদে উঠলাম, সববনাশী, এই যদি তোর মনে ছিল, এ সংসারে ঢুকেছিলি কেন ? বিনুকে পৰ্যন্ত যে নিয়ে চললি, ভুই কি