পাতা:শ্রীকান্ত - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৪০৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

o রতন অধোমুখে দাড়াইয়া রহিল, রাজলক্ষ্মী একবার আমার ও একবার তাহার প্রতি দৃষ্টিপাত করিয়া নিজেও হাসিয়া ফেলিয়া বলিল, হতভাগা আধঘণ্টা ধরে ঝগড়া করলে, তবু বললে না যে, ও-সব ছোট কাজ রতনবাবুর নয়। যা, কাউকে ডেকে আনাগে। সে চলিয়া গেলে আমি জিজ্ঞাসা করিলাম, সকালে উঠেই এ-সব যে ? রাজলক্ষ্মী বলিল, মানুষের খাবার জিনিস সকালেই পাঠাতে হয় । কিন্তু কোথায় পাঠানো হচ্ছে ? এবং তার হেতু ? রাজলক্ষ্মী কহিল, হেতু মানুষে খাবে, এবং যাচ্ছে বামুনবাড়ীতে । কহিলাম। বামুনটি কে ? রাজলক্ষ্মী হাসিমুখে ক্ষণকাল চুপ করিয়া রহিল, বোধ হয়। ভাবিল নামটা বলিবে কিনা ; কিন্তু পরীক্ষণেই কহিল, দিয়ে বলতে নেই, পুণ্যি কমে যায়। যাও, তুমি হাত-মুখ ধুয়ে কাপড় ছেড়ে এসো-তোমাব চা তৈরি হয়ে গেছে। আমি আর প্রশ্ন না কবিয়া বাহিরে চলিয়া গেলাম । বেলা বোধ হয় তখন দশটা, বাহিরের ঘরে তক্তাপোষের উপর বসিয়া কাজের অভাবে একখানা পুরানো সাপ্তাহিক কাগজের বিজ্ঞাপন পড়িতেছিলাম, একটা অচেনা কণ্ঠস্বরের সম্ভাষণে মুখ তুলিয়া দেখিলাম, আগন্তুক অপরিচিতই বটে। কহিলেন, নমস্কার বাবুমশায়। আমিও হাত তুলিয়া প্ৰতি-নমস্কার করিয়া বলিলাম, বসুন। ব্ৰহ্মণের অতিশয় দীন বেশ, পায়ে জুতা নাই, গায়ে জামা নাই, শুধু একখানি মলিন উত্তরীয়, পরিধানের বস্ত্ৰখানিও তেমনি মলিন, উপরন্তু দু-তিন স্থান গ্ৰন্থি বঁধা । পল্লীগ্রামে ভদ্র ব্যক্তির আচ্ছাদনের দীনতা, বিস্ময়ের বস্তুও নয়, কেবলমাত্র ইহার উপরেই তঁহার সাংসারিক অবস্থা অনুমান করাও চলে না । তিনি সম্মুখে বাঁশের মোড়াটার উপরে উপবেশন করিয়া কহিলেন, আমি আপনার একজন দরিদ্র প্রজা, ইতিপূর্বেই আমার আসা কৰ্ত্তব্য ছিল-ভারি ত্রুটি হয়ে গেছে। আমাকে জমিদার মনে করিয়া কেহ আলাপ করিতে আসিলে আমি মনে মনে যেমন লজ্জিত হইতাম, তেমনি বিরক্ত হইতাম ; বিশেষতঃ