পাতা:শ্রীকান্ত - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৪৪১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শ্ৰীকান্ত লোকটি ঘোড়া হইতে নামিল ; পরনে তাহার ছিন্ন ও মলিন সাহেবী পোষাক, মাথার জরাজীর্ণ সোলার হ্যাট খুলিয়া হাতে লইয়া কহিল, আমি সতীশ ভরদ্বাজ । থার্ড ক্লাস থেকে প্রোমোশন না পেয়ে সার্ভে-স্কুলে পড়তে যাই, মনে পড়ে না ? মনে পড়িল। খুনী হইয়া কহিলাম, তাই বল, তুমি আমাদের ব্যাঙ। এখানে সাহেব সেজে যাচ্ছ কোথায় ? ব্যাঙ হাসিয়া কহিল, সাহেব কি আব্ব সাধে সাজি ভাই, রেলওয়ে কনস্ট্রাকশনে সাব-ওভাবসিয়াবি চাকরি কবি, কুলি তাডাতেই জীবন যায়, হ্যাট কোট না থাকলে কি আবে বক্ষা ছিল ? এতদিনে তাবাই আমাকে তাডাতো । সোপালপুবে একটু বাবাত সেবে ফিবছি-মাইল-টাক দূরে আমাব তাবু, সাঁইথিয়া থেকে যে নতুন লাইন বসছে তাতেই কাজ । যাবে। আমাৰ ওখানে ? চা খেয়ে আসবে ? অস্বীকাব কবিয়া কহিলাম, আজ নয়, কোনদিন যদি সুযোগ হয়। एकान”द । ব্যাঙ তখন অনেক কথা জিজ্ঞাসা কবিতে লাগিল-শাবীব কেমন, কোথায থাকি, এখানে কি সূত্রে আসা, ছেলে-মেয়ে কয়টি, তাহারা কে কেমন আছে ইত্যাদি । জবাবে বলিলাম, শরীর ভাল নয়, থাকি গঙ্গামাটিতে, যে সূত্রে এখানে আসা তাহ অত্যন্ত গোলমেলে । ছেলে-মেয়ে নাই, অতএব তাহারা কে কেমন আছে এ প্রশ্ন নিরর্থক । ব্যাঙ সাদাসিধা-গোছের লোক। আমার উত্তরগুলা ঠিক বুঝিতে না। পারিলেও অপরেব ব্যাপাব বুঝিতেই হইবে এরূপ দৃঢ়-সঙ্কল্প ব্যক্তি সে নয়। সে নিজের কথাই বলিতে লাগিল । জায়গাটি স্বাস্থ্যকর, তারি-তরকারি মেলে, মাছ এবং মুধ চেষ্টা করিলে পাওয়া যায়, তবে লোকজন নাই, সঙ্গীসাখীর অভাব, কিন্তু কষ্ট বিশেষ হয় না, কারণ সন্ধার পরে একটু নেশাভাঙ করিলেই বেশ চলিয়া যায় । সাহেবরা হাজার হোক বাঙালীর } চেয়ে ঢের ভাল,- -গোছের তাড়ির শেড একটা খোলা হইয়াছৈ-যত ইচ্ছা খাও, তাহার নিজের' ত একরকম পয়সা লাগে না।