পাতা:শ্রীকান্ত - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৪৫৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

SS শ্ৰীকান্ত মিথ্যা বলে নাই। এই কুটীরটা ছাড়া অগ্নিসংযোগ করিতে পারি এরূপ দ্বিতীয় বস্তু নাই; কিন্তু সাহস হইল না, পাছে প্ৰাণ বাহির হইবার পূব্বেই তাহাকে সৎকার করিয়া ফেলি! ক্যাম্প-খাট এবং কেরোসিনের বাক্স বাহিরে আনিয়া দেশলাই জ্বালিয়া তাহাতে আগুন ধরাইলাম, নিজের জামা খুলিয়া পুটুলির মত করিয়া কিছু কিছু সেক দিবার চেষ্টা করিলাম, কিন্তু নিজেকে সান্থনা দেওয়া ছাড়া রোগীর কোন উপকারই তাহাতে হইল না । রাত্ৰি দুটাই হইবে কি তিনটাই হইবে, খবর আসিল জন-দুই কুলির ভেদ-বমি হইতেছে। তাহারা আমাকে ডাক্তারবাবু বলিয়া মনে করিয়াছিল। তাহাদেরই আলোর সাহায্যে ঔষধপত্ৰ লইয়া কুলি-লাইনে গিয়া উপস্থিত হইলাম । মালগাড়ীতে তাহারা থাকে। ছাদ-বিহীন খোলা ট্রাকের সারি লাইনের উপর দাড়াইয়া আছে, মাটি-কাটার প্রয়োজন হইলে ইঞ্জিন জুড়িয়া দিয়া তাহদের গন্তব্য স্থানে টানিয়া লইয়া যাওয়া হয়। বঁশের মই দিয়া ট্রাকের উপর উঠিলাম। একাধারে একজন বুড়োগোছের লোক শুইয়া আছে, তাহার মুখের পরে আলো পড়িতেই বুঝা গেল রোগ সহজ নয়, ইতিমধ্যেই অনেকদূর অগ্রসর হইয়া গিয়াছে। অন্যধারে জন পাঁচ-সাত লোক, স্ত্রী-পুরুষ দুই-ই আছে, কেহ বা ঘুম ভাঙ্গিয়া উঠিয়া বসিয়াছে, কাহারও বা তখন পৰ্য্যন্ত সুনিদ্রার ব্যাঘাত ঘটে নাই । ইহাদের জমাদার আসিয়া উপস্থিত হইল। সে বেশ বাঙলা বলিতে পারে, জিজ্ঞাসা করিলাম, আর একজন রোগী কই ? সে অন্ধকারে অঙ্গলি নির্দেশ করিয়া আর একখানা। ট্রাক দেখাইয়া কহিল, উখানে । পুনরায় মই দিয়া উপরে উঠিয়া দেখিলাম, এবার একজন স্ত্রীলোক । বয়স পঁচিশ-ত্রিশের অধিক নয়, গুটি-দুই ছোট-ছোট ছেলে-মেয়ে তাহার পাশে পড়িয়া ঘুমাইতেছে। স্বামী নাই; সে গতবৎসর আড়কাঠির পাল্লায় পড়িয়া আর একটি অপেক্ষাকৃত কম বয়সের শ্ৰীলোক লইয়া থআসামে চা-বাগানে কাজ করিতে গিয়াছে ।