পাতা:শ্রীকান্ত - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৪৭১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

v9C AyriVU পূর্বে বলিয়াছি ছেলেটি স্পষ্টবাদী। কহিল, তুমি বাবু নেবে যাও। মামা বলে গেছে ভাড়া পাঁচসিকে । কম দিলে আমাকে মারবে । কহিলাম, আমার জন্যে তুমি মার খাবে সে কেমন কথা ! একবার ভাবিলাম, এই গাড়ীতেই যথাস্থানে ফিরিয়া যাই ; কিন্তু কেমন যেন প্ৰবৃত্তি হইল না। রাত্ৰি আসন্ন, স্থান অপরিচিত, লোকালয় যে কোথায় এবং কতদূরে বুঝিবার যো নাই ; কেবল সুমুখে একটা বড় আম-কঁঠালের বাগান দেখিয়া অনুমান করিলাম গ্ৰাম বোধ হয় বেশিদূরে হইবে না। আশ্রয় তা একটা মিলিবে । আর যদি নাই মিলে তাহাতেই বা কি ? না হয় এমনি করিয়াই এবারের যাত্ৰা সুরু হইবে। নামিয়া ভাড়া চুকাইয়া দিলাম। দেখিলাম ছেলেটির শুধু কথাই নয়, কাজের ধারাও চমৎকার স্পষ্ট। নিমিষে গাড়ীর মুখ ফিরাইয়া লইল, বৃষযুগল গৃহে প্ৰত্যাগমনের ইঙ্গিতামাত্র চােখের পলকে অদৃশ্য হইয়া গেল। সন্ধ্যা শেষ হইল বলিয়া, কিন্তু রাত্রির অন্ধকার গাঢ়তর হইয়া উঠিতে তখনও বিলম্ব ছিল। এই সময়টুকুর মধ্যে যেমন করিয়া হোক আশ্ৰয় একটা খুজিয়া বাহির করিতে হইবে। এ কাজ আমার পক্ষে নূতনও নহে, কঠিন বলিয়াও কোনদিন ভয় হয় নাই ; কিন্তু আজ সেই আমবাগানের পাশ দিয়া পায়ে-চলার পথের রেখা ধরিয়া যখন ধীরে ধীরে অগ্রসর হইতে লাগিলাম, তখন কেমন যেন উদ্বিগ্ন লজ্জায় মনের ভিতরটা ভরিয়া আসিতে লাগিল। ভারতের অন্যান্য প্রদেশের সঙ্গে একদিন ঘনিষ্ঠ পরিচয় ছিল, কিন্তু এখন যে পথে চলিয়াছি সে যে বাঙলার রাঢ় দেশ। ইহার সম্বন্ধে ত কোন অভিজ্ঞতা নাই; কিন্তু এ-কথা স্মরণ হইল না যে, সে-সকল দেশের সম্বন্ধেও একদিন এমনি অনভিজ্ঞই ছিলাম, জ্ঞান যাহা কিছু পাইয়াছি তাহা এমনি করিয়াই আপনাকে সঞ্চয় করিতে হইয়াছিল, অপরে করিয়া দেয় নাই ।