পাতা:শ্রীকান্ত - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৪৭৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

छैकाख 888 যাবে। খাড়িমুসুরের খিচুড়ি, আলুভাতে, তোফা লাগবে খেতে । ঘি আছে, গরম গরম চক্ৰবৰ্ত্তীর রসনা সরস হইয়া উঠিল ; কিন্তু আমার কাছে ব্যাপারটা আরও জটিল হইয়া উঠিল ; কিন্তু পাছে আমার কোন কথায় বা কাজে আবার একটা প্ৰলয় কাণ্ড বাধিয়া যায় এই ভয়ে তঁহার নির্দেশমত ছাড়ি চড়াইয়া দিলাম। চক্ৰবৰ্ত্তী-গৃহিণী আড়ালে ছিলেন, স্ত্রীলোকের চক্ষে আমার অপটু হস্ত গোপন রহিল না, এবার তিনি আমাকেই উদ্দেশ করিয়া কথা কহিলেন। তঁহার আর যা দোষই থাক, সঙ্কোচ বা চক্ষুলজ্জা বলিয়া যে শব্দগুলা অভিধানে আছে, তাহাদেব অতিবাহুল্য দোষ যে ইহার ছিল না। এ-কথা বোধ করি অতিবড় নিন্দুকেও স্বীকার না করিয়া পরিবে না। তিনি কহিলেন, তুমি ত বাছা রান্নার কিছুই জান না । আমি তৎক্ষণাৎ মানিয়া লইয়া বলিলাম, আজ্ঞে, না । তিনি বলিলেন, কৰ্ত্তা বলছিলেন বিদেশী লোক, কে বা জানবে, কে বা শুনবে । আমি বললাম, তা হতে পারে না । একটা রাত্তিরের জন্য একমুঠো ভাত দিয়ে আমি মানুষের জাত মারতে পারবো। আমরা বাবা অগ্ৰদানী বামুন। আমার যে আপত্তি নাই, এবং ইহা অপেক্ষা ও গুরুতর পাপ ইতিপূবেবী” করিয়াছি - এ-কথা বলিতেও কিন্তু সাহসী হইল না, পাছে স্বীকার করিলেও কোন বিভ্ৰাট ঘটে। মনের মধ্যে শুধু একটি মাত্ৰ চিন্তা, কেমন করিয়া রাত্ৰি কাটিবে এবং এই বাড়ীর নাগপাশ হইতে অব্যাহতি লাভ করিব। সুতরাং-নিৰ্দেশ মত খিচুড়িাও রাধিলাম, এবং পিণ্ড পাকাইয়া গরম ঘি দিয়া তোফা গিলিবার চেষ্টাও করিলাম। এ অসাধ্য যে কি করিয়া সম্পন্ন করিলাম আজও বিদিত নই, কেবলই মনে হইতে লাগিল চাল-ডালের তোফা পিণ্ড পেটের মধ্যে গিয়া পাথরের পিণ্ড পাকাইতেছে। অধ্যবসায়ে অনেক কিছুই হয়, কিন্তু তাহারও সীমা আছে। হাত-মুখ ধুইবারও অবসর মিলিল না, সমস্ত বাহির হইয়া গেল। ভয়ে শীর্ণ হইয়া উঠিলাম, কারণ এগুলো যে আমাকেই পরিষ্কার করিতে হইবে তাহাতে সন্দেহ নাই; কিন্তু সে-শক্তি আর ছিল না। চোখের দৃষ্টি ঝাঞ্চল হইয়া