পাতা:শ্রীকান্ত - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৪৮২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

*Aviv 8p তাই আর লোক পাওয়া গেল না, ছোট ছেলেটাকে সঙ্গে নিয়ে একা একেই শ্মশানে নিয়ে যেতে হ’ল । তাও কি সৎকার করা গেল ? কাঠ-কুটে কেউ কেটে দিলে না, বাপ হয়ে গৰ্ত্ত খুড়ে বাছাকে পুতে রেখে ইনি ঘরে ফিরে এলেন। বলিতে বলিতে র্তাহার পুরাতন শোক একেবারে নূতন করিয়া দেখা দিল । চোেখ মুছিতে মুছিতে যাহা বলিতে লাগিলেন তাহার মোট অভিযোগ এই যে, তঁহাদের পূর্বপুরুষদের কোন কালে কে শ্ৰাদ্ধের দান গ্ৰহণ করিয়াছিলেন, সেই ত অপরাধ ? অথচ শ্ৰাদ্ধ হিন্দুদের অবশ্যকৰ্ত্তব্য এবং কেহ-না-কেহ গ্ৰহণ না করিলে সে শ্ৰাদ্ধ অসিদ্ধ ও নিস্ফল হইয়া যায়। তবে দোষটা কোথায় ? আর দোেষই যদি থাকে ত মানুষকে প্ৰলুব্ধ করিয়া সে কাজে প্ৰবৃত্ত করানো কিসের জন্য ? এসকল প্রশ্নের উত্তর দেওয়াও যেমন কঠিন, পূর্ব-পিতামহগণের কোন দুস্কৃতির শাস্তিস্বরূপ তাহদের বংশধরগণ একাপ বিড়ম্বনা ভোগ করিতেছেন তাহা এতকাল পরে আবিষ্কার করা ও তেমনি দুঃসাধ্য । শ্ৰাদ্ধের দান লওয়া ভাল কি মন্দ জানি না । মন্দ হইলেও এ-কথা সত্য যে, ব্যক্তিগতভাবে এ কাজ ঊর্তাহারা করেন না, অতএব নিরপরাধ। অথচ প্ৰতিবেশী হইয়া আর একজন প্ৰতিবেশীর জীবন-যাত্রার পথ বিনা দোষে মানুষে এতখানি দুৰ্গম ও দুখময় করিয়া দিতে পারে, এমন হৃদয়হীন নিৰ্দয় বর্বরতার উদাহরণ জগতে বোধ করি এক হিন্দুসমাজ ব্যতীত আর কোথাও নাই । তিনি পুনশ্চ কহিলেন, এ গ্রামে লোক বেশি নেই, জ্বর-ওলাউঠায় অৰ্দ্ধেক মরে গিয়েছে। এখন আছে শুধু ব্ৰাহ্মণ, কায়স্থ আর রাজপুত । আমাদের যে কোন উপায় নেই বাবা, নইলে ইচ্ছে হয়, কোন মুসলমানের গ্রামে গিয়ে বাস করি । বলিলাম, কিন্তু সেখানে ত জাত যেতে পারে । চক্রবর্তী-গৃহিণী এ প্রশ্নের ঠিক জবাব দিলেন না, কহিলেন, আমার সম্পর্কে একজন খুড়শ্বশুর আছেন, তিনি দুমকায় চাকরি করতে গিয়ে শ্ৰীষ্টান হয়েছেন। তঁরা ত আর কোন কষ্টই নেই । চুপ করিয়া রহিলাম। হিন্দুধৰ্ম্ম ।’ ত্যাগ করিয়া কেহ ধৰ্ম্মান্তরী-গ্ৰহণে