পাতা:শ্রীকান্ত - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৪৮৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

o88 चैकाछ , অপরিচিত নয়, অত্যন্ত নূতন। ইহাই খাওয়ানোর সময়ে একেবারে সুস্পষ্ট হইয়া উঠিল। অথচ কিসে এবং কেমন করিয়া যে সুস্পষ্ট হইল, কেহ জিজ্ঞাসা করিলে আমি অস্পষ্ট করিয়াও বুঝাইতে পারিতাম না। হয়ত এই কথাটাই প্ৰত্যুত্তরে বলিতাম যে, মানুষেয় অত্যন্ত ব্যথার অনুভূতি প্ৰকাশ করিবার ভাষা বোধ হয় আজিও আবিষ্কত হয় নাই। রাজলক্ষ্মী খাওয়াইতে বসিল, কিন্তু খাওয়া-না-খাওয়া লইয়া তাহার আগেকার দিনের সেই অভ্যস্ত জবরদস্তি ছিল না, ছিল ব্যাকুল অনুনয়। জোর নয়, ভিক্ষ । বাহিবের চক্ষে তাহ ধরা পড়ে না, পড়ে শুধু মানুষের নিভূত হৃদয়েব আপলক চোখ-দুটির দৃষ্টিতে । খাওয়া শেষ হইল। রাজলক্ষ্মী কহিল, আমি এখন যাই ? অতিথি-সজ্জন বাহিরে সমবেত হইতেছিলেন, বলিলাম, যাও । আমাৰ উচ্ছিষ্ট পাত্রগুলি হাতে লইয়া সে যখন ধীরে ধীরে ঘর হইতে বাহির হইয়া গেল, তখন বহুক্ষণ পৰ্যন্ত আমি অন্যমনে সেই দিকে চাহিয়া নীরবে বসিয়া রহিলাম। মনে হইতে লাগিল, রাজলক্ষ্মীকে যেমনটি রাখিয়া গিয়াছিলাম। এই ক’টা দিন পরে তেমনটি ত আর ফিরিয়া পাইলাম না । আনন্দ বলিয়াছিল, কাল হইতেই দিদির একপ্ৰকার অনাহারে কাটিয়াছে, আজ জলস্পর্শ করেন নাই, এবং কাল কত বেলায় যে তঁহার উপবাস ভাঙ্গিবো তাহারী কিছুমাত্ৰ নিশ্চয়তা নাই । অসম্ভব নয় । চিরদিনই দেখিয়া আসিয়াছিল ধৰ্ম্মপিপাসু-চিত্ত তাহার কোনদিন কোন কৃচ্ছসাধনেই পরামুখ নয়। এখানে আসিয়া অবধি সুনন্দার সাহচর্য্যে সেই অবিচলিত নিষ্ঠ তাহার নিরন্তর বাড়িয়াই উঠিতেছিল। আজ তাহাকে অল্পক্ষিণ মাত্ৰই দেখিবার অবকাশ পাইয়াছি, কিন্তু যে দুজ্ঞেয় রহস্যময় পথে সে এই অবিশ্রান্ত দ্রুতবেগে পা ফেলিয়া চলিয়াছে, মনে হইল, তাহার নিন্দিত-জীবনের সঞ্চিত কালিমা যত বড়ই হোক। আর তাহার নাগাল পাইবে না । কিন্তু আমি ? আমি যে ৩াহার পথের মাঝখানে উজুঙ্গ গিরিশ্রেণীর মত সমস্ত অবরোধ করিয়া আছি! - কাজকৰ্ম্ম সারিয়া নিঃশব্দ-পদে রাজলক্ষ্মী যখন গৃহে প্ৰবেশ করিল। তখন রাত্ৰি বোধহয় দশটা ৷ আলো কমাইয়া, অত্যন্ত সাবধানে আমার