পাতা:শ্রীকান্ত - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৫০২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শ্ৰীকান্ত è yo নাই। ভাবিতাম, আমার জন্য সে অনেক স্বাৰ্থ বিসজ্জন দিয়াছে ; কিন্তু আজ চোখে পড়িল ঠিক তাহাই নয়। রাজলক্ষ্মীর স্বার্থের কেন্দ্ৰটা এতকাল দেখি নাই বলিয়াই এরূপ ভাবিয়া আসিয়াছি। বিত্ত, অর্থ, ঐশ্বৰ্যঅনেক কিছুই সে ত্যাগ করিয়াছে, কিন্তু সে কি আমারই জন্য ? আৰুজন-স্তুপের মত সে-সকল কি তাহার নিজের প্রয়ােজনেরই পথ বােধ করে নাই ? আমি এবং আমাকে লাভ করার মধ্যে যে রাজলক্ষ্মীর কতবড় প্ৰভেদ ছিল সেই সত্য আজ আমার কাছে প্ৰতিভাত হইল। আজ তাহার চিত্ত ইহলোকের সমস্ত পাওয়া তুচ্ছ করিয়া অগ্রসর হইতে উদ্যত হইয়াছে। তাহার সেই পথ জুড়িয়া দাড়াইবার স্থান আমার নাই । অতএব অন্যান্য আবৰ্জনার মত আমাকেপ যে এখন পথের একধাবে অনাদরে পড়িয়া থাকিতে হইবে, তাহা যত বেদনাই দিক, অস্বীকাব করিবার পথ নাই । অস্বীকাব করিও না কখনও । পরদিন সকালেই জানিতে পারিলাম ধূৰ্ত্ত রতন তথ্য যাহা সংগ্ৰহ করিয়াছিল। তাহা ভ্ৰান্ত নহে। গঙ্গামাটি-সম্পৰ্কীয় যাবত য় ব্যবস্থাই স্থির হইয়া গিয়াছিল। রাজলক্ষ্মীর নিজের মুখেই তাহ অবগত হইলাম। প্ৰভাতে নিয়মিত পূজা-আহ্নিক সমাধা করিয়া সে অপরাপর দিনেব মত বাহির হইল না । ধীরে ধীরে আমার কাছে আসিয়া বসিল, কহিল, পরশু এমনি সময়ে যদি খাওয়া শেষ ক’রে আমরা বার হয়ে যেতে পাবি ত সঁইথিয়ায় পশ্চিমের গাড়ী অনায়সে ধরতে পারবো, কি বলে ? বলিলাম, পারবে । রাজলক্ষ্মী কহিল, এখানকার বিলি-ব্যবস্থা ত একরকম শেষ ক’রে ফেলমাম। কুশারীমশাই যেমন দেখছিলেন শুনছিলেন, তেমনিই করবেন। কহিলাম, ভালই হ’ল । রাজলক্ষ্মী ক্ষণকাল মৌন হইয়া রহিল বোধহয় প্রশ্নটা ঠিকমত আরম্ভ করিতে পারিতেছিল না বলিয়াই শেষে কহিল, বন্ধুকে চিঠি লিখে দিয়েচি, সে একখানা গাড়ী রিজাভ ক’রে টেশনেই উপস্থিত থাকবে ; কিন্তু থাকে। তবেই ত । বলিলাম, নিশ্চয় থাকবে । সে তোমার আদেশ লঙ্ঘন করবে না ।