পাতা:শ্রীকান্ত - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৫১০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শ্ৰীকান্ত Ax A 8. দেখি নাই। বস্তুতঃ ইহাও সত্য, এবং কাহারও অপেক্ষা আমি নিজেও কম জানি না ; কিন্তু চুপ করিয়া রহিলাম। সময় হইয়া আসিল, ঘোড়ার গাড়া দ্বারের সম্মুখে আসিয়া দাড়াইল, গুরুদেবের নিকট বিদায় লইয়া আমি গাড়ীতে গিয়া বসিলাম । রাজলক্ষ্মী পথে আনিয়া গাড়ীর ভিতরে হাত বাড়াইয়া বার বার করিয়া আমার পায়ের ধূলা মাথায় দিল, কিন্তু কথা কহিল না । বোধহয় সে শক্তি তাহার ছিল না। ভালই হইল যে, অন্ধকারে সে আমার মুখ দেখিতে পাইল না। আমিও স্তব্ধ হইয়া রহিলাম, কি যে বলিব, খুজিয়া পাইলাম না । শেষ-বিদায়ের পালাটা নিঃশব্দে সাঙ্গ হইল। গাড়ী ছাড়িয়া দিলে দুই চোখ দিয়া আমার ঝরুঝির করিয়া জল পড়িতে লাগিল। সব্বাস্ত:- কারণে কহিলাম, তুমি সুখী হও, শান্ত হও, তোমার লক্ষ্য ধ্রুব হোক তোমাকে হিংসা করি না, কিন্তু যে দুৰ্ভাগা সমস্ত বিসজ্জন দিয়া একই সাথে একদিন তরণী ভাসাইয়াছিল এ-জীবনে তাহার আর কুল মিলিবে না। ঘরঘের ঝরঝর করিয়া গাড়ী চলিতে লাগিল, গঙ্গামাটির সকল স্মৃতি আলোড়িত হইয়া উঠিল। সেদিন বিদায়ের ক্ষণে যে সকল কথা মনে আসিয়াছিল, আবার তাহাই জাগিয়া উঠিল। মনে হইল, এই যে এক জীবন-নাট্যোব অত্যন্ত স্কুল এবং সাধু উপসংহার হইল ইহার খ্যাতির আর অন্ত নাই। ইতিহাসে লিপিবদ্ধ করিলে ইহার অমান দীপ্তি কোনদিন নিবিবে না, সশ্রদ্ধ বিস্ময়ে মাথা নত করিবার মত পাঠকেরও কোনদিন সংসারে অভাব ঘটিবে না-কিন্তু আমার নিজের কথা কাহাকেও বলিবার নহে-আমি চলিলাম অন্যত্র। আমারই মত যে কলুষের পঙ্কে মগ্ন হইয়া আছে, ভাল হইবার আর পথ নাই, সেই অভয়ার আশ্রয়ে । মনে মনে রাজনক্ষ্মীকে উদ্দেশ করিয়া কহিলাম, তোমার পুণ্য জীবন উন্নত হইতে উন্নততর হোক, তোমার মধ্য দিয়া ধন্মের মহিমা উজ্জ্বল হইতে উজ্জলতর হোক, আমি আর ক্ষোভ করিব না। অভয়ার চিঠি পাইয়াছি। স্নেহের প্ৰেমে, করুণায় অটল অভয়া, ভগিনীর অধিক বিদ্রোহী অভয়া আমাকে সাদরে নিমন্ত্ৰণ করিয়াছে। বৰ্ম্ম হইতে আসিবার কালে ক্ষুদ্র দ্বারপ্রান্তে তাহার সজল চক্ষু মনে পড়িল, মনে পড়িল তাহার সমস্ত অতীত ও বর্তমান