পাতা:শ্রীকান্ত - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৫২৬

奇零博 R তাহার আমন্ত্রণের অকপট আন্তরিকতায় মুগ্ধ হইলাম। কতকাল পরে দেখা, কিন্তু ঠিক সেদিনের সেই গহর-এতটুকু বদলায় নাই--তেমনি ছেলেমানুষ-তেমনি বন্ধু সম্মিলনে তাহার অকৃত্রিম উল্লাসের ঘট । গহররা মুসলমান-ফকির সম্প্রদায়ের লোক। শুনিয়াছি তাহার পিতামহ বা "ল, রামপ্রসাদী ও অন্যান্য গান গাহিয়া ভিক্ষা করিত, তাহার একটা পোষা শালিক পাখীর অলৌকিত সঙ্গীত-পারদর্শিতার কাহিনী তখনকার দিনে এদিকে প্ৰসিদ্ধ ছিল। গহরের পিতা কিন্তু পৈতৃক বৃত্তি ত্যাগ করিয়া তেজারিতি ও পাটের ব্যবসায়ে অর্থে পার্জন করিয়া ছেলের জন্য সম্পত্তি খরিদ করিয়া রাখিয়া গিয়াছে, অথচ ছেলে পাইল না বাপের বিষয়-বুদ্ধি-পাইয়াছে ঠাকুর্দার কাব্য ও সঙ্গীতের অনুরাগ। সুতরাং, পিতার বহুশ্রমাজ্জিত জমিজমা চাষীআবাদের শেষ পরিণাম যে কি দাড়াইবে তাহাও সন্দেহের বিষয়। সে যাই হোক, বাড়ীটা তাহদের দেখিয়াছিলাম ছেলেবেলায়। ভালো মনে নাই। এখন হয়ত তাহ রূপান্তরিত হইয়াছে কবির বাণীসাধনার তপোবনে। আর একবার চোখে দেখিবার আগ্ৰহ জন্মিল । তাহাদের গ্রামের পথ আমাদের পরিচিত, তাহার দুৰ্গমতার চেহারাও মনে পড়ে, কিন্তু অল্প কিছুক্ষণেই জানা গেল। শৈশবের সেই মনে-পড়ার সঙ্গে আজকের চোখে-দেখার একেবারে কোন তুলনাই হয় না। বাদশাহী আমলের রাজবক্স-অতিশয় সনাতন। ইট-পাথরের পরিকল্পনা এদিনের জন্য নয়, সে দুরাশা কেহ করে না, কিন্তু সংস্কারের সম্ভাবনাও লোকের মনে হইতে বহুকাল পূর্বে মুছিয়া গিয়াছে। গ্রামের লোকে জানে অনুযোগ অভিযোগ বিফল-তাহদের জন্য কোনদিনই রাজকোষে অর্থ নাই-তাহারা জানে পুরুষানুক্ৰমে পথের জন্য শুধু ‘পখকরা যোগাইতে হয়, কিন্তু সে পথ যে কোথায় এবং কাহার জন্তু এ সকল চিন্তা করাও তাহদের -কাছে বাহুল্য ।