পাতা:শ্রীকান্ত - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৫৬৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

s শ্ৰীকান্ত বললে, শ্ৰীকান্ত এসেছিল। তুমি যে শীঘ্রই আবার আসবে তাও সে বলেছে। তুমি বৰ্ম্মাদেশে যাবে তাও জানি। শুনিয়া স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলিয়া মনে মনে বলিলাম, রক্ষা হোক, ভয় হইয়াছিল সত্যই বা ইনি কোন অলৌকিক আধ্যাত্মিক শক্তিবলে আমাকে দেখিবামাত্রই চিনিয়াছেন। যাই হোক, এ ক্ষেত্রে আমার সম্বন্ধে তাহার আন্দাজটা যে বেঠিক হয় নাই তাহ মানিতেই হইবে। বাবাজীকে ভালো বলিয়াই ঠেকিল, অন্ততঃ অসাধু প্ৰকৃতির বলিয়া মনে হইল না। বেশ সরল। কি জানি, কেন ইহাদের কাছে গহর আমার সকল কথাই বলিয়াছে।--অর্থাৎ যতটুকু সে জানে। বাবাজী সহজেই তাহা স্বীকার করিলেন। একটু ক্ষ্যাপাটে গোছের-হয়ত কবিতা ও বৈষ্ণবী-রাসচর্চায় কিঞ্চিৎ বিভ্ৰান্ত । অনতিকাল পরেই গহর গোসাঁইয়ের সঙ্গে কমললতা আসিয়া উপস্থিত হইল। বয়স ত্ৰিশের বেশী নয়, শ্যামবর্ণ, আটসাট ছিপছিপে গড়ন, হাতে কয়েক গাছি চুড়ি-হয়ত পিতলের, সোনার হইতেও পারে, চুল ছোট নয়, গেরো দেওয়া পিঠের উপর ঝুলিতেছে, গলায় তুলসার মালা, হাতে থলির মধ্যেও তুলসীর জপমালা। ছাপছেপের খুব বেশী আড়ম্বর নাই কিম্বা হয়ত সকালের দিকে ছিল, এ-বেলায় কিছু কিছু মুছিয়া গিয়াছে। ইহার মুখের দিকে চাহিয়া কিন্তু ভয়ানক আশ্চৰ্য্য হইয়া গেলাম। সবিস্ময়ে মনে হইল। এই চােখ-মুখের ভাবটা যেন পরিচিত এবং চলার ধরনটাও যেন পূর্বে কোথাও দেখিয়াছি। বৈষ্ণবী কথা কহিল। সে যে নীচের স্তরের লোক নয়। তৎক্ষণাৎ বুঝিলাম। সে কিছুমাত্র ভূমিকা করিল না, সোজা আমার প্রতি চাহিয়া কহিল, কি গোঁসাই, চিনতে পারো ? বলিলাম, না ; কিন্তু কোথায় যেন দেখেছি মনে হচে ।