পাতা:শ্রীকান্ত - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৫৭২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

yo বৈষ্ণবী কহিল, তাও না । সেবার সকাল-সন্ধ্যা নেই, দয়া করে যদি দুদিন থাকো নিজেই সব দেখতে পাবে। দাসী আমরা, ওঁর সেবা করা ছাড়া সংসারে আর তা আমাদের কোন কাজ নেই। এই বলিয়া সে মন্দিরের দিকে হাতজোড় করিয়া আর একবার নমস্কার করিল। জিজ্ঞাসা করিলাম, সারাদিন কি তোমাদের করতে হয় ? বৈষ্ণবী কহিল, এসে যা দেখলে, তাই। কহিলাম, এসে দেখলাম বাটনা বাটা, কুটনো কোটা, দুধ জ্বাল দেওয়া, মালা গাথা, কাপড় রং করা-এমনি অনেক কিছু। তোমরা সারাদিন কি শুধু এই করো ? বৈষ্ণবী কহিল, হাঁ, সারাদিন শুধু এই করি। কিন্তু এসব ত কেবল ঘর-গৃহস্থালীর কাজ, সব মেয়েরাই করে। তোমরা ভজন-সাধন করো কখন ? বৈষ্ণবী কহিল, এই আমাদের ভজন-সাধন । এই রাধাবাড়া, জল-তোলা, কুটুনো-বাটুনা, মালা-গাথা, কাপড়ছোপানো-একেই বলে সাধনা ? বৈষ্ণবী বলিল, হঁ, একেই বলি সাধনা। দাস-দাসীর এব চেয়ে বড় সাধনা আমরা পাব কোথায় গোসাই ? বলিতে বলিতে তাহার সজল চোখ দুটি যেন অনির্বচনীয় মাধুৰ্য্যে পরিপূর্ণ হইয়া উঠিল। আমার হঠাৎ মনে হইল। এই অপরিচিত বৈষ্ণবীর মুখের মত সুন্দর মুখ আমি সংসারে কখনো দেখি নাই। বলিলাম, কমললতা, তোমার বাড়ী কোথায় ? বৈষ্ণবী আঁচলে চোেখ মুছিয়া হাসিয়া বলিল, গাছতলায়। কিন্তু গাছতলা ত আর চিরকাল ছিল না ? يP বৈষ্ণবী কহিল, তখন ছিল ইট-কাঠের তৈরী কোন এক বাড়ীর ছোট একটি ঘর ; কিন্তু সে গল্প করার তা এখন সময় নেই গোঁসাই। এসো ত আমার সঙ্গে, তোমার নতুন ঘরটি দেখিয়ে দিই।