পাতা:শ্রীকান্ত - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৫৭৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S ईकास्छ চমৎকার ঘরখানি। বাঁশের আলনায় একটি পরিষ্কার তসরের কাপড় দেখাইয়া দিয়া কহিল, ঐট পরে ঠাকুরঘরে এসো। দেৱী ক’রো না যেন । এই বলিয়া সে দ্রব্ৰুত চলিয়া গেল । একধারে ছোট একটি তক্তপোষে পাতা বিছানা। নিকটেই জলচৌকির উপরে রাখা কয়েকখানি গ্ৰন্থ ও একথালা বকুল ফুল ; এইমাত্ৰ প্ৰদীপ জ্বলিয়া কেহ বোধহয় ধূপধুনা দিয়া গিয়াছে, তাহার গন্ধ ও ধূয়ায় ঘবটি তখনও পূর্ণ হইয়া আছে-ভারী ভালো লাগিল। সারাদিনের ক্লান্তি ত ছিলই, ঠাকুর-দেবতাকেও চিরদিন পাশ কাটাইয়া চলি, সুতরাং ওদিকের আকর্ষণ ছিল না-কাপড় ছাড়িয়া ঝুপ কবিয়া বিছানায় শুইয়া পড়িলাম। কি জানি এ কাহার ঘর, কাহার শয্যা ; অজ্ঞাত বৈষ্ণবী একটা রাত্রির জন্য আমাকে ধারা দিয়া গেল-কিম্বা হয়ত, এ তাহার নিজেরই -কিন্তু এ সকল চিন্তায় মন আমার স্বভাবতঃই ভারী সঙ্কোচ বোধ কবে, অথচ আজ কিছু মনেই হইল না, যেন কতকালের পরিচিত আপনার জনের কাছে হঠাৎ আসিয়া পড়িয়াছি। বোধ হয় একটু তন্দ্ৰাবিষ্ট হইয়া পড়িয়ছিলাম, কে যেন দ্বারের বাহিরে ডাক দিল, নতুনগোঁসাই, মন্দিরে যাবে না ? ওঁরা তোমাকে ডাকচেন যে ! ধড়মড় করিয়া উঠিয়া বসিলাম । মন্দিরা সহযোগে কীৰ্ত্তন গান কানো গেল, বহুলোকের সমবেত কোলাহল নয়, গানের কথাগুলি যেমন মধুর তেমনি সুস্পষ্ট। বামাকণ্ঠ রমণীকে চোখে না দেখিয়াও নিঃসন্দেহে অনুমান করিলাম। এ কমলিলতা । নবীনের বিশ্বাস এই মিষ্ট স্বরই তাহার প্রভুকে মজাইয়াছে। মনে হইল অসম্ভব নয় এবং অত্যন্ত অসঙ্গতও নয় । মন্দিরে ঢুকিয়া নিঃশব্দে একাধারে গিয়া বসিলাম ; কেহ চাহিয়া দেখিল না। সকলের দৃষ্টিই রাধাকৃষ্ণের যুগলমূৰ্ত্তির প্রতি নিবন্ধ। মাঝখানে দাড়াইয়া কমললত কীৰ্ত্তন করিতেছে-মদনগোপাল জয় জয় যশোদাদুলাল কি, যশোদাদুলাল জয় জয় নন্দদুলাল কি ।