পাতা:শ্রীকান্ত - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৬২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কান্ত SSS একটি ডালায় ভরিয়া যশোদা মালা-ঘুনাসি, আর্শি-চিরুণী, আলতা, তেলের মশলা, কঁাচের পুতুল, টিনের বঁাশী প্ৰভৃতি লইয়া দুপুরবেলায় বাড়ী বাড়ী বিক্ৰী করিত। আর ছিল তাহার মাছ ধরিবার সাজসরঞ্জাম। বড়ো ব্যাপার নয়, দু-এক পয়সা মূল্যের ডোর-কঁটা। এই কিনিতে যখন তখন তাহার ঘরে গিয়া আমরা উৎপাত করিতাম। এই আউশ গাছের একটা শুকনো ডালের উপর কাদা দিয়া জায়গা করিয়া যশোদা সন্ধ্যাবেলায় প্ৰদীপ দিত। ফুলের জন্য আমরা উপদ্ৰব করিলে সে সমাধিটি দেখাইয়া বলিত, না বাবাঠাকুর, ও আমার দেবতার ফুল, তুললে তিনি রাগ করেন। বৈষ্ণবী নাই, সে কবে মরিয়াছে জানি না-হয়ত খুব বেশিদিন নয়। চোখে পড়িল গাছের একাধারে আর একটি ছোট মাটির টিপি, বোধ হয় যশোদারই হইবে। খুব সম্ভব, সুদীর্ঘ প্ৰতীক্ষার পরে আজ স্বামীর পাশেই সে একটু স্থান করিয়া লইয়াছে। ভূপের খোড়া মাটি অধিকতর উর্বর হইয়া বিছুটি ও বনৰ্চাড়ালের গাছে গাছে সমাচ্ছন্ন হইয়াছে’-যত্ন করিবার কেহ নাই । পথ ছাড়িয়া সেই শৈশবের পরিচিত বুড়ো গাছটির কাছে গিয়া দাড়াইলাম। দেখি, সন্ধ্যা দেওয়া সেই দীপটি আছে নীচে পড়িয়া, এবং তাহারি উপরে সেই শুকনো ডালটি আছে আজও তেমনি তেলে কালো হইয়া । যশোদার ছোট্ট ঘরটি এখনো সম্পূর্ণ ভূমিসাৎ হয় নাই-সহস্ৰ ছিদ্রময় শতজীর্ণ খড়ের চালখানি দ্বার ঢাকিয়া হুমড়ি খাইয়া পড়িয়া আজও প্ৰাণপণে আগলাইয়া আছে । কুড়ি-পঁচিশ বর্ষ পূর্বের কত কথাই মনে পড়িল। কঞ্চির বেড়া দিয়া ঘেরা নিকানো-মুছানো যশোদার উঠান, আর সেই ছোট ঘরখানি। সে আজ এই হইয়াছে ; কিন্তু এর চেয়েও ঢের বড় করুণ বস্তু তখনও দেখার বাকি ছিল। অকস্মাৎ চোখে পড়িল সেই ঘরের মধ্য হইতে ভাঙা চালের নীচে দিয়া গুড়ি মারিয়া একটা কঙ্কালসার