পাতা:শ্রীকান্ত - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৬৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

g শ্ৰীকান্ত মেরেছে-এই দুষ্ঠাখ । জামার আস্তিন তুলিয়া দেখাইল, বাহুতে প্ৰায় দুইতিন ইঞ্চি পরিমাণ ক্ষত এবং তাঁহা দিয়া অজস্র রূক্তস্রাব হইতেছে। ইন্দ্ৰ কহিল, কঁাদিস নো-এই কাপড়টা দিয়ে খুব টেনে বেঁধে দে-এই খবরদার। ঠিক আমনি বসে থাকে। উঠলেই গলায় পা দিয়ে তোমার জিভ টেনে বা’র করব।-হারামজাদা শুয়ার। নে, তুই টেনে বঁাধ-দেৱী করিসনে । বলিয়া সে চড়াচড় করিয়া তাহার কেঁাচার খানিকটা টানিয়া ছিডিয়া ফেলিল। আমি কম্পিত হস্তে ক্ষতিটা বঁাধিতে লাগিলাম এবং শাহজী অদূরে বসিয়া মুমূর্ষু বিষাক্ত সৰ্পেব দৃষ্টি দিয়া নিঃশব্দে চাহিয়া দেখিতে লাগিল । ইন্দ্ৰ কহিল, না, তোমাকে বিশ্বাস নেই, তুমি খুন করতে পারে। আমি তোমার হাত বঁধিব। —বলিয়া তাহারই গেরুয়ারিঙে ছোপানো পাগড়ি দিয়া টানিয়া টানিয়া তাহার দুই হাত জড়ো করিয়া বঁধিয়া ফেলিল। সে বাধা দিল না, প্ৰতিবাদ করিল না, একটা কথা পৰ্যন্ত কহিল না । যে লাঠিটার আঘাতে দিদি অচৈতন্য হইয়া পড়িয়াছিলেন সেটা তুলিয়া লইয়া একপাশে রাখিয়া দিয়া ইন্দ্ৰ কহিল, কি নেমকহারাম শয়তান এই ব্যাটা । বাবার কত টাকা যে চুবি করে একে দিয়েছি, আরও কত হয়ত দিতাম, যদি দিদি না আমাকে মাথার দিব্যি দিয়ে নিষেধ করত । আর ও স্বচ্ছদে ঐ বল্লমটা আমাকে ছুড়ে মেরে বসল। শ্ৰীকান্ত, নজর রাখা যেন না। ওঠে। -আমি দিদির চোখে মুখে জলেব ঝাপটা দিই। জলের ঝাপটা দিয়া বাতাস করিতে করিতে কহিল, যেদিন থেকে দিদি বললে, ইন্দ্রনাথ, তোমার রোজগারের টাকা হলে নিতাম, কিন্তু এ নিয়ে আমাদের ইহকাল পরকাল মাটি করব না, সেইদিন থেকে ঐ শয়তান ব্যাটা দিদিকে কত মার মেবেচে, তার হিসেবা-নিকেশ নেই। তবু দিদি ওকে কাঠ কুড়িয়ে, ঘুটে বেচে খাওয়াচ্ছে, গাঁজার পয়সা দিচ্ছে-তবু কিছুতে ওর হয় না । কিন্তু আমি ওকে পুলিশে দিয়ে তবে ছাড়ব-না হ’লে দিদিকে ও খুন করে ফেলবে-ও খুন করতে পারে। আমার মনে হইল, লোকটা যেন এই কথায় শিহরিয়া মুখ তুলিয়া