পাতা:শ্রীকান্ত - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বীরত্ব প্ৰকাশ করিতেছেন। এমনি সময়ে সেই মেঘনাদ কোথা হইতে একেবারে লাফ দিয়া সুমুখে আসিয়া পড়িল । সমস্ত স্টেজটা মড়মড় করিয়া কঁপিয়া দুলিয়া উঠিল-ফুট-লাইটের গোটা পাঁচ-ছয় ল্যাম্প উল্টাইয়া নিবিয়া গেল, এবং সঙ্গে সঙ্গে তাহার নিজের পেট-বাঁধা জারির কোমরবন্ধটা পটাস করিয়া ছিাড়িয়া পড়িল । একটা হৈ-চৈ পড়িয়া গেল। তাহাকে বসিয়া পড়িবার জন্য কেহ বা সভয় চীৎকারে অনুনয় করিয়া উঠিল, কোঁহ-বা পিন ফেলিয়া দিবার জন্য চেচাইতে লাগিল-কিন্তু বাহাদুর মেঘনাদ ! কাহারও কোন কথায় বিচলিত হই7লন না । বঁ হাতের ধনুক ফেলিয়া দিয়া, পেণ্টলানেৰ মুখ চাপিয়া ধবিয়া ডান হাতের শুধু তীর দিয়াই যুদ্ধ করতে লাটি লেন । ধন্য বীৰ ! ধন্য বীরত্ব। অনেকে অনেক প্রকাব যুদ্ধ দেখিয়াছে মানি, কিন্তু ধনুক নাই, বা হাতের অবস্থা ও যুদ্ধক্ষেত্রের অনুকুল নয়,-শুধু ডান হাত এবং তীব দিয়া ক্ৰমাগত যুদ্ধ কে কবে দেখিয়াছে। অবশেষে তাহাতেই ঞ্জিত । বিপক্ষকে সে-যাত্ৰা পলাইয়া আত্মরক্ষা করিতে হইল । আনন্দের সীমা নাই মগ্ন হইয়া দেখিতেছি এবং অপরূপ লড়াইয়ের জন্য মনে মনে তাহাক শতকোটি প্রশংসা করিতেছি, এমন সময় পিঠের উপর একটা আঙ্গুলোর চাপ পড়িল ! মুখ ফিরাইয়া দেখি-ইন্দ্ৰ। চুপি চুপি কহিল, আয় শ্ৰীকাগু, দিদি একবার তোকে ডাকচোন। তড়িৎস্পৃষ্টের মত সোজা খাড়া হইয়া উঠিলাম। কোথায় তিনি ? বেরিয়ে আয় না-বলচি । পথে আসিয়া সে শুধু কঠিল, আমাব সঙ্গে আয় -বলিয়া চলিতে লাগিল । গঙ্গাৰ ঘাটে পৌছিয়া দেখিলাম, তাহার নৌকা বঁধা আছে। নিঃশব্দে উভয়ে চড়িয়া বসিলাম, ইন্দ্ৰ বঁধন খুলিয়া দিল । আবার সেই সমস্ত অন্ধকার বনের পথ বাহিয়া দু’জনে শাহ জীৱ কুটীরে আসিয়া উপস্থিত হইলাম। তখন বোধ করি, রাত্রি আর বেশী নাই।